
বিরাট কোহলি
ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসর ঘোষণা নড়ে চড়ে দিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বকে। ইংল্যান্ড সফরের ঠিক আগে এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ভক্ত-সমর্থক সবাই। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা কেভিন পিটারসেন সোশ্যাল মিডিয়ায় “বিরাট?!” লিখে তার বিস্ময় প্রকাশ করেন, আর ভারতেরই প্রাক্তন স্পিনার হরভজন সিং সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন অবসরের সিদ্ধান্ত?”
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বিরাট কোহলির এ সিদ্ধান্ত আকস্মিক হলেও তিনি তা ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চাওয়ার প্রবল ইচ্ছাই ছিল তার এমন সিদ্ধান্তের মূল কারণ।
সূত্র জানায়, গত মাসের শুরুতেই কোহলি বিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার এবং এক শীর্ষ ক্রিকেট প্রশাসককে একটি বার্তা পাঠান, যেখানে তিনি টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানান। তবে তিনি ওয়ানডে চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কোহলির এমন সিদ্ধান্তে বিসিসিআই তখন অবাক হয়ে যায় এবং তাকে তাড়াহুড়ো না করে আরও সময় নেওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু কোহলি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। গত ৭ মে তিনি বিসিসিআইকে জানান যে, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিতে চান। তবে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চলাকালীন সময় হওয়ায় তাকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে বলা হয়। অবশেষে যুদ্ধবিরতির পর, সোমবার (গতকাল) তিনি নিজের ইনস্টাগ্রামে অবসরের ঘোষণা দেন।
পরিবারের প্রতি কোহলির ভালোবাসা নতুন কিছু নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম উপলক্ষে খেলতে পারেননি তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগেও পরিবারের প্রয়োজনে ইংল্যান্ড উড়ে গিয়েছিলেন। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশে ফিরেই দলের উদযাপন শেষে রাতেই তিনি ইংল্যান্ডে পরিবারের কাছে চলে যান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর বিসিসিআই নতুন নির্দেশনা দেয়, যাতে দীর্ঘ সফরে খেলোয়াড়েরা পরিবারের সঙ্গে ১৪ দিনের বেশি সময় কাটাতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্ত কোহলির মনঃপূত হয়নি।
আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “পরিবারের গুরুত্ব মানুষ বোঝে না... আমি চাই না একা একা মুখ গোমড়া করে থাকতে। পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চাই। খেলাটাকে দায়িত্ব হিসেবে নিতেই হলে জীবনের ভারসাম্য দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর কোনো সুযোগই আমি হাতছাড়া করতে চাই না। এই বিষয়টিকে (বোর্ডের নির্দেশনা) নিয়ে আমি হতাশ। পরিবারকে এসব আলোচনার বাইরে রাখা প্রয়োজন।”
সবকিছু মিলিয়ে, বিরাট কোহলি হয়তো মাঠ ছেড়েছেন টেস্টের দিক থেকে, কিন্তু যে দায়বদ্ধতা ও আবেগ নিয়ে তিনি পরিবার ও খেলাকে দেখেছেন, তা আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনন্য বার্তা হয়ে থাকবে।