ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৮ আগস্ট ২০২৫

Advertisement
Advertisement

চাহিদা কমায় ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে রডের দাম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৩ আগস্ট ২০২৫

চাহিদা কমায় ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে রডের দাম

রড

দেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সরকারি খরচ কমানোর নীতি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে নির্মাণখাত। এই প্রেক্ষাপটে তিন বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো রডের দাম টনপ্রতি ৯০ হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের নির্মাণ ও অবকাঠামো প্রকল্পে বহুল ব্যবহৃত ৬০-গ্রেড মাইল্ড স্টিল (এমএস) রডের খুচরা দাম গত সপ্তাহে টনপ্রতি ৮৫ থেকে ৮৯ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কম। অথচ এক বছর আগেও এ রডের দাম ছিল ৯৭,৫০০ থেকে ৯৯,৫০০ টাকা।

এখন রডের দাম ২০২২ সালের মার্চের দামকেও ছাড়িয়ে আরও নিচে নেমেছে, যখন প্রতি টনের দাম ছিল ৯১,৫০০ টাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটি একবার সর্বোচ্চ প্রায় ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

৩৫% পর্যন্ত চাহিদা হ্রাস

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে দেশে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন রড ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৪ লাখ টনের নিচে—অর্থাৎ প্রায় ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বিএসএমএ মহাসচিব এবং আরআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী বলেন, “গত ২৭ জুলাই মাত্র কয়েক মিনিটে নয় শতাংশ দাম কমেছে। এটা অস্বাভাবিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বলতে গেলে নেই বললেই চলে।”

তিনি আরও জানান, ছোট মিলগুলো টিকে থাকতে পারছে না। সীমিত ব্যাংক ঋণ ও খরচ সংকটের কারণে বন্দর স্টিল, মোহাম্মদী স্টিলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন স্থগিত করেছে। অনেক মিল বাধ্য হয়ে ৮৫ হাজার টাকা বা তারও কম দামে রড বিক্রি করছে শুধু কারখানা সচল রাখার জন্য।

বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প পানির নিচে চলে গেছে, ফলে কাজ শুরু করাও সম্ভব হচ্ছে না।

এডিপি বাস্তবায়নেও রেকর্ড নিম্নগতি

সুমন চৌধুরী বলেন, “গত ৪৯ বছরের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নের হার সবচেয়ে কম। এটি সরাসরি স্টিলের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”

বাজারের মূল চালিকা শক্তি সরকারি প্রকল্প

বিএসএমএ’র তথ্যমতে, দেশের স্টিল চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে সরকারি নির্মাণ ও অবকাঠামো প্রকল্প থেকে। এসব প্রকল্প স্থবির হয়ে যাওয়ায় সারাদেশে চাহিদা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বিএসআরএম-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, “উৎপাদন ঠিক আছে, কিন্তু দাম একদমই চাহিদা নির্ভর। চাহিদা না থাকলে দামের পতন স্বাভাবিক। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় ধরে এই নিম্নমুখী প্রবণতা আগে কখনও দেখা যায়নি।”

তিনি জানান, কোম্পানিগুলো এখন টিকে থাকার জন্যই ব্যবসা করছে। অনেকে বেতন, ঋণ ও ইউটিলিটি বিল মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে।

শহরাঞ্চলে নির্মাণ ৩০-৪০% কমেছে

জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন। এর প্রভাব শহরের নির্মাণ প্রকল্পে পড়েছে। সেখানে কাজ ৩০–৪০ শতাংশ কমেছে। বড় প্রকল্পগুলোতে এই হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।”

তিনি জানান, গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্প তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও সেগুলো ধীরগতির। উপরন্তু, গত ছয় সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সরকারি পদক্ষেপের ওপর

তিনজন শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভাষ্যমতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে সরকারকে নতুন অবকাঠামো প্রকল্প চালু করতে হবে অথবা স্থগিত প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। অন্যথায়, এই মন্দা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531