
ওয়াই-ফাইয়ের রেডিয়েশন নিয়ে নতুন গবেষণা: কতটা ঝুঁকিতে আমরা
আজকের দিনে ঘরে, অফিসে কিংবা জনসমাগমস্থলে অসংখ্য ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে আমরা প্রতিনিয়ত সংযুক্ত থাকি। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ব্লুটুথ স্পিকারসহ নানা ডিভাইস এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে—এই অদৃশ্য রেডিয়েশন কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর? টাইম ম্যাগাজিন
বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ বহুদিনের
মেডিকেল কলেজ অফ উইসকনসিনের রেডিয়েশন অনকোলজির প্রফেসর জন মোল্ডার জানান, ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন নিয়ে গবেষণা বহু বছর ধরেই চলছে। ১৯৫০-এর দশকে নৌবাহিনীর শক্তিশালী শিপবোর্ড রাডারে কাজ করা সেনাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব নিয়ে প্রথম উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপর ধাপে ধাপে মোবাইল ও ওয়াই-ফাই রেডিয়েশনের প্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
কী বলে গবেষণা?
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন টিউমার বা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। তবে ওয়াই-ফাই বা মোবাইল ফোনের মতো নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে খুব কম, যা সাধারণত ত্বকের ক্ষতির বাইরে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না।
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর কেনেথ ফস্টার জানান, ওয়াই-ফাই রাউটার সাধারণত মাত্র ০.১ শতাংশ সময় তথ্য প্রেরণ করে। অর্থাৎ বেশিরভাগ সময়ই এটি কেবল সক্রিয় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এছাড়া রাউটার থেকে যত বেশি দূরে থাকা যায়, শরীরে রেডিয়েশনের প্রভাবও তত কমে।
তবুও সতর্কতার পরামর্শ
অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোয়েল মোস্কোভিটজ মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী নিম্নমাত্রার রেডিয়েশনও উপেক্ষা করার মতো নয়। প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের রেডিয়েশন স্নায়বিক বিকাশে সমস্যা, ক্যানসার ও প্রজননজনিত জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) মোবাইল ফোনকে সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রমাণ মেলেনি যে ওয়াই-ফাই বা মোবাইল রেডিয়েশন সরাসরি ক্যানসার ঘটায়।
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে ওয়াই-ফাই ও মোবাইল রেডিয়েশনের মাত্রা সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তাই ঝুঁকি কমাতে কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে পারেন-
- অপ্রয়োজনীয় হলে ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখুন।
- ডিভাইস শরীর থেকে দূরে রেখে ব্যবহার করুন।
- শিশুদের দীর্ঘসময় ডিভাইস ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করুন।
সংক্ষেপে, এখনই ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। তবে সতর্কতা ও সচেতন ব্যবহারই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে নিরাপদ পথ।