
পুলিশ
পুলিশ বাহিনীর ১১ জন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি)সহ মোট ৭৬ জন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা পুলিশ কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জ, জেলা ও পুলিশ ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বুধবার (৬ আগস্ট) এই আদেশ জারি করা হয়।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও প্রশ্ন। কারণ, ওএসডি পদে থাকা কর্মকর্তারা কার্যত কর্মবিহীন অবস্থায় থাকেন। তাই তাঁদের হঠাৎ করে বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানোর উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয় ও বিতর্ক।
ঢাকায় একত্রিত হয়ে “সরকারবিরোধী” বৈঠকের অভিযোগ
জননিরাপত্তা বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকায় অবস্থানরত ওএসডি কর্মকর্তারা নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে বৈঠকে মিলিত হতেন এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেন। এমনকি তাদের কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ সরকারিভিত্তিক নথি পাচার করতে পারেন—এমন সন্দেহের কথাও উঠে এসেছে অভ্যন্তরীণ মহলে।
সেই শঙ্কার ভিত্তিতেই ৭৬ জন কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ইউনিটে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়, যেন তাঁরা আর দলবদ্ধভাবে কোনো ষড়যন্ত্রে অংশ নিতে না পারেন।
পলাতকদেরও সংযুক্তি, তালিকা নিয়ে দ্বন্দ্ব
সংযুক্তদের তালিকায় কিছু পলাতক কর্মকর্তার নামও রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, পুলিশের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ তালিকা না পাওয়ার কারণেই কিছু পলাতক কর্মকর্তার নাম অনিচ্ছাকৃতভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, তারা ২৪ জুলাই সর্বশেষ ৪৩ জন পলাতক কর্মকর্তার একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, “ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। পুলিশ সদর দপ্তর শুধু অনুপস্থিত বা আত্মগোপনে থাকা সদস্যদের তথ্য দিয়েছে।”
ডিআইজি পর্যায়ের ১১ কর্মকর্তার সংযুক্তি
৭৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ডিআইজি পদমর্যাদার ১১ জনকে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন:
-
শাহ্ মিজান শাফিউর রহমান – রংপুর রেঞ্জ
-
মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ – সিলেট রেঞ্জ
-
মো. জাকির হোসেন খান ও মো. শাহ আবিদ হোসেন – চট্টগ্রাম রেঞ্জ
-
মো. ইলিয়াছ শরীফ – সিলেট রেঞ্জ
-
সৈয়দ নূরুল ইসলাম – রংপুর রেঞ্জ
-
জিহাদুল কবির – চট্টগ্রাম রেঞ্জ
-
মো. মনিরুজ্জামান – সিলেট রেঞ্জ
-
মো. মাহবুবুর রহমান – খুলনা রেঞ্জ
-
মঈনুল হক ও এস এম মোস্তাক আহমেদ খান – রাজশাহী পুলিশ একাডেমি
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রদবদল ঘটে। তখনকার সরকারের ঘনিষ্ঠ ও উচ্চ পদে থাকা বহু কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়, কেউ কেউ বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়।
নতুন সরকারের অধীনে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বলা হচ্ছে, এই সংযুক্তিকরণ একটি ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’। তবে অনেকেই বলছেন, এটি এক ধরনের ‘রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান’, যা ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে পারে।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া:
এই পদক্ষেপকে অনেকে স্বাগত জানালেও, কারও মতে এটি প্রশাসনিক স্বাধীনতা হরণ এবং সরকারের সমালোচক কণ্ঠরোধের কৌশল। বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়িত হতে পারে।