
নাকের ছত্রাক
নাকের ভেতরে পলিপ বা টিউমারের মতো কিছু দেখা যাচ্ছে? বারবার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে বা বন্ধ হয়ে থাকছে? হতে পারে আপনি আক্রান্ত হয়েছেন এক ধরনের বিরল ছত্রাক সংক্রমণে, যার নাম রাইনোস্পোরিডিওসিস (Rhinosporidiosis)। এটি এক ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন, যা শুধু নাকে নয়, শরীরের অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রাইনোস্পোরিডিওসিস কী?
রাইনোস্পোরিডিওসিস একটি ক্রনিক ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, যা Rhinosporidium seeberi নামের এক ধরনের জলজ ছত্রাকের মাধ্যমে হয়। এই সংক্রমণ প্রধানত নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে (submucosa) ঘটে, তবে এটি চোখ, মুখগহ্বর, যোনিপথ বা ত্বকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কীভাবে সংক্রমণ ঘটে?
এই রোগের মূল বাহক হলো ছত্রাকের স্পোর (বীজাণু), যা ছড়ায়—
-
গরু-ছাগল বা ঘোড়ার মল থেকে
-
পুকুরের পানি ও
-
সংক্রমিত বাতাসের মাধ্যমে
সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম হলো পানিতে গোসল বা নাকের কোনো ক্ষত দিয়ে স্পোর প্রবেশ করা। এরপর এই স্পোর নাকের ভেতরে স্পোরানজিয়া নামক কোষ গঠন করে, যা ফেটে গিয়ে টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রিঅ্যাকটিভ হাইপারপ্লাসিয়া ঘটায়—ফলে এটি দেখতে হয় স্ট্রবেরির মতো টিউমার।
রোগের লক্ষণসমূহ
রাইনোস্পোরিডিওসিসে আক্রান্ত হলে নীচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
-
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
-
নাক দিয়ে রক্তপাত
-
নাকে চুলকানি
-
নাকের ভেতরে স্ট্রবেরির মতো পলিপ
-
দীর্ঘস্থায়ী নাকের ভেতরে অস্বস্তি
কে বেশি ঝুঁকিতে?
-
পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়
-
বয়স ১১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি
-
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকাতে রোগটি বেশি দেখা যায়
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
-
বায়োপসি: আক্রান্ত টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়
-
হিস্টোপ্যাথলজি: টিস্যুর গঠন বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করা হয় রোগটি
চিকিৎসা পদ্ধতি
এই রোগের কার্যকর চিকিৎসা হলো শল্যচিকিৎসা (অস্ত্রোপচার)। আক্রান্ত টিস্যু বা পলিপ:
-
সম্পূর্ণভাবে কেটে ফেলা হয়
-
কাটা জায়গা কটারাইজেশন (জ্বলিয়ে দেওয়া) করা হয় রক্তপাত বন্ধ করতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে
এই অপারেশনের পর রোগ সাধারণত পুনরায় ফিরে আসে না, তবে নিয়মিত ফলোআপ জরুরি।
জনসচেতনতার আহ্বান
রাইনোস্পোরিডিওসিস প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত:
-
পশু পালনের পর হাত ধোয়া
-
অনিরাপদ পুকুরে গোসল এড়িয়ে চলা
-
নাক বা শরীরের ক্ষতস্থানে সাবধানতা
-
নাক বন্ধ বা রক্তপাতের মতো সমস্যায় অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
চিকিৎসকদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এটি সংক্রামক না হলেও অসচেতনতা ও অবহেলায় জটিল আকার নিতে পারে। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
রিপোর্ট: স্বাস্থ্য ডেস্ক, ChatGPT সংবাদ
(আপনি চাইলে এই প্রতিবেদনটি PDF, DOCX বা ছবির ফরম্যাটেও নিতে পারেন)