
ঘুম থেকে উঠে দেখলেন মুখ বেঁকে গেছে
মুখের এক পাশে হঠাৎ বেঁকে যাওয়া, চোখ বন্ধ না হওয়া—বেলস পালসির প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে
সময়ের মধ্যে চিকিৎসা ও সঠিক ব্যায়ামে ৭৩% রোগী পুরোপুরি সুস্থ হন
এক সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখা গেল মুখটা বেঁকে গেছে…
সুস্থ অবস্থায় রাতে ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু সকালে আয়নার সামনে গিয়ে দেখলেন—মুখের এক পাশ যেন ঝুলে পড়েছে। চোখ পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। মুখে পানি নিয়ে কুলি করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এমন হঠাৎ পরিবর্তন অনেককেই আতঙ্কিত করে তোলে। অথচ এটি হতে পারে বেলস পালসি, যাকে ফেশিয়াল পালসিও বলা হয়।
এটি একটি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, যার কারণে মুখের এক পাশের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব।
বেলস পালসি কী?
বেলস পালসি হলো মুখের পেশি নিয়ন্ত্রণকারী ফেশিয়াল নার্ভ (৭ নম্বর ক্রেনিয়াল নার্ভ)–এর সাময়িক প্যারালাইসিস বা দুর্বলতা। এই নার্ভে চাপ, ফোলা বা প্রদাহ হলে নার্ভ থেকে পেশিতে সঠিকভাবে সংকেত পৌঁছায় না। ফলে মুখের এক পাশ অচল হয়ে যায়।
এটি সাধারণত এক পাশেই দেখা দেয় এবং কোনো পূর্বসংকেত ছাড়াই হঠাৎ শুরু হয়। ভালো খবর হলো—এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৭৩ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বেলস পালসির কারণগুলো কী হতে পারে?
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
ঠান্ডা বা তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন
মাথায় বা ঘাড়ে আঘাত
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া
ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থা
স্ট্রোক (মধ্যে কখনো ভুল নির্ণয়ও হতে পারে)
লক্ষণগুলো যেগুলো নজরে রাখবেন:
-
মুখের এক পাশে হঠাৎ দুর্বলতা বা ঝুলে পড়া
-
হাসলে এক পাশ না উঠা
-
চোখ বন্ধ করতে সমস্যা
-
মুখে অসারতা বা জ্বালা অনুভব
-
কান বা জিভে ব্যথা
-
স্বাদে পরিবর্তন বা স্বাদের অনুভূতি হ্রাস
-
অতিরিক্ত চোখে পানি পড়া বা চোখ শুকিয়ে যাওয়া
-
কথা বলতে কষ্ট হওয়া বা অস্পষ্টতা
-
ভ্রু কুঁচকাতে না পারা
চিকিৎসা: ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকর
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেলস পালসির চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুখের পেশি সচল করতে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম ও থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। যেমন:
প্রোপ্রিয়োসেপটিভ নিউরোমাস্কুলার ফেসিলিটেশন (PNF) থেরাপিউটিক ম্যাসাজ
ফেশিয়াল নার্ভ মোবিলাইজেশন
মিমিক থেরাপি
ইলেকট্রোথেরাপি
ফিজিওথেরাপি কেবল চিকিৎসাকেন্দ্রে নয়, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায়ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়।
সতর্কতা: যা মেনে চলা জরুরি
ঠান্ডা খাবার, বরফজাতীয় খাবার বা ঠান্ডা পানি পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে
মুখে বা শরীরে সরাসরি ঠান্ডা বাতাস লাগানো যাবে না (ফ্যান, এসি ইত্যাদি)
চোখে শুকনো ভাব থাকলে কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শে)
চোখ ঠিকমতো না বন্ধ হলে সানগ্লাস বা আইপ্যাচ ব্যবহার করা যেতে পারে
মানসিক চাপ কমিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: অবহেলা নয়, দ্রুত ব্যবস্থা নিন
“বেলস পালসি অনেকের কাছেই স্ট্রোক মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আলাদা একটি অবস্থা এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠা যায়। তবে দেরি করলে স্নায়ুর ক্ষতি স্থায়ীও হতে পারে।”
উপসংহার: আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি
বেলস পালসি কোনো অজানা রোগ নয়—তবে সচেতন না হলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করতে পারে। মুখ বেঁকে যাওয়া বা চোখ বন্ধ না হওয়াকে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি শুরু হবে, সেরে ওঠার সম্ভাবনাও তত বেশি।