ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৮ আগস্ট ২০২৫

Advertisement
Advertisement

পোড়া রোগীর চিকিৎসা: ডিম মাখানো যাবে না, যা করা দরকার

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৩ আগস্ট ২০২৫

পোড়া রোগীর চিকিৎসা: ডিম মাখানো যাবে না, যা করা দরকার

পোড়া রোগী

দেশে ২০২৪ সালে দিনে গড়ে ৭৩টি করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সর্বশেষ তথ্যমতে, এই আগুনে অন্তত ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৩৪১ জন। আরও অসংখ্য মানুষ চুলা বিস্ফোরণ, গ্যাস লিকেজ কিংবা তাপদাহজনিত নানা দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন।

পোড়া একটি বিপজ্জনক শারীরিক অবস্থা, যা শুধু ত্বক নয়, শ্বাসতন্ত্র, রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দগ্ধ হওয়ার পরপরই প্রাথমিক সঠিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে প্রাণরক্ষা এবং জটিলতা কমানো সম্ভব।


কীভাবে মানুষ দগ্ধ হয়

আগুনের শিখা, গরম পানি বা তেল, উত্তপ্ত ধাতু (যেমন: মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার), বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, অ্যাসিড ও ক্ষার—এসবই পোড়া লাগার সাধারণ কারণ। অগ্নিকাণ্ডের পাশাপাশি গৃহস্থালি দুর্ঘটনাও পোড়া রোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।


প্রাথমিক চিকিৎসা: যা করা জরুরি

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আলম বলেন,
“আগুন থেকে উদ্ধার করে যত দ্রুত সম্ভব পোড়া স্থানে অন্তত ১০ মিনিট ধরে ঠান্ডা পানি ঢালুন। দগ্ধ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে এটা করা সবচেয়ে কার্যকর।”

যা করা যাবে না:

  • বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি

  • টুথপেস্ট, ডিম, চুন, কাদা বা ঘরোয়া ‘টোটকা’
    এসব ব্যবহারে ক্ষত আরও সংক্রমিত হতে পারে।


ওষুধ ও চিকিৎসা: কীভাবে সাড়া দেবেন

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়:

  • ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল

  • প্রচুর ওরস্যালাইন

  • পোড়া স্থানে সিলভার সালফাডায়াজিন ১% ক্রিম ও পরিষ্কার গজ

যখন হাসপাতালে ভর্তি জরুরি:

  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ≥১৫% দগ্ধ

  • শিশুদের ক্ষেত্রে ≥১০% দগ্ধ

  • শ্বাসনালী পুড়লে তাত্ক্ষণিক আইসিইউ চিকিৎসা দরকার


দগ্ধ রোগীর জটিলতা

  • রক্তরস হারিয়ে শকে যাওয়া

  • ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (রক্তে লবণের ঘাটতি)

  • সংক্রমণ, যেহেতু পোড়া ত্বক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না

  • দীর্ঘমেয়াদি দাগ, গিরা বেঁকে যাওয়া

  • শ্বাসতন্ত্র পুড়লে কণ্ঠস্বর পরিবর্তন বা শ্বাসকষ্ট


স্কিন গ্রাফটিং: চিকিৎসার উন্নত ধাপ

বড় আকারের দগ্ধ ক্ষত সারাতে এখন দেশেই ত্বক প্রতিস্থাপন (স্কিন গ্রাফটিং) হয়। রোগীর নিজের শরীর থেকেই ত্বক সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হয়।
উন্নত ড্রেসিং প্রযুক্তির ফলে এখন আর মাছের চামড়া ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না।


বাংলাদেশে চিকিৎসার সুযোগ

দেশে এখন পোড়া রোগীর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে:

  • জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

  • দেশের আরও ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট

এই ইউনিটগুলোতে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অস্ত্রোপচার সুবিধা, আইসিইউ এবং হাইপারবেরিক অক্সিজেন থেরাপির মতো উন্নত প্রযুক্তি।


হাসপাতালের পরে যত্ন: ফলোআপ জরুরি

দগ্ধ রোগীদের বাড়ি ফিরে গিয়েও ফলোআপ চিকিৎসা নিতে হয়। উপেক্ষা করলে শরীরের জটিলতা বাড়তে পারে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও ড্রেসিং পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে পারে।


সচেতনতা ও প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুন প্রতিরোধ এবং দগ্ধ রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে এই মৃত্যুহার অনেকটাই কমানো সম্ভব।
সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই পোড়া রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531