ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২২ মে ২০২৫

Advertisement
Advertisement

নোবেলের উত্থানের গল্প, পতনের পদধ্বনি

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২১ মে ২০২৫

নোবেলের উত্থানের গল্প, পতনের পদধ্বনি

নোবেল

এক সময় সারা বাংলার হৃদয় কাঁপানো কণ্ঠশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল আবারও শিরোনামে—তবে এবার গানের কারণে নয়, ভয়াবহ এক অপরাধের অভিযোগে। সাত মাস ধরে এক কলেজছাত্রীকে রাজধানীর ডেমরার একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন নোবেল। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ মে রাত ১০টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে এবং নোবেলকে আটক করে।

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে এনে নোবেল দীর্ঘদিন আটকে রাখেন। এ সময় ধর্ষণের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করতেন তিনি। মেয়েটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ চিকিৎসাধীন।

উত্থানের গল্প, পতনের পদধ্বনি

নোবেলের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল এক স্বপ্নময় যাত্রায়। ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো 'সারেগামাপা'-তে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন তিনি। দর্শকরা ভেবেছিলেন, বাংলা গানের জগতে এক নতুন কিংবদন্তির সূচনা ঘটছে। কিন্তু জনপ্রিয়তার সেই শিখরে থেকেও তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি।

বিতর্কে ঘেরা ব্যক্তিগত জীবন

নোবেলের নাম বারবার এসেছে মাদকাসক্তি, পারিবারিক সহিংসতা, অশ্লীল আচরণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য। স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা, কনসার্টে মদ্যপ অবস্থায় পারফর্ম করা, বিশিষ্ট গায়কদের নিয়ে অশোভন মন্তব্য—এসব ঘটনায় বহুবার সমালোচিত হয়েছেন তিনি। জেল খেটেছেন একাধিকবার।

২০১৯ সালেই চট্টগ্রামের এক তরুণী তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর বিয়ে করেন সালসাবিল মাহমুদকে, যা বেশিদিন টেকেনি। সম্প্রতি ফুড ব্লগার ফারজানা আরশিকে বিয়ে করলেও সে সম্পর্কও ভেঙে যায় অল্প সময়েই।

সাংবাদিক ও শিল্পী সমাজের সঙ্গে সংঘর্ষ

নোবেলের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে হুমকি, ইথুন বাবুকে ‘চোর’ বলার মতো বক্তব্যের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। সাংবাদিকদের সংগঠন বাচসাস তাঁকে ‘বর্জনের হুমকি’ দিয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও মাদক–নিয়ন্ত্রণের অভাব

নোবেল বহুবার মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন। ফেসবুকে নিজের অনুশোচনার কথা প্রকাশ করলেও সেসব বক্তব্য বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন শিল্পীদের ক্ষেত্রে সমাজ ও পরিবারকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

আইনি লড়াই ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন

নোবেলের আইনজীবীর দাবি, মামলার বাদী আসলে তাঁর বৈধ স্ত্রী এবং নোবেল সংসার করতে আগ্রহী। তবে মেয়েটির চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের বিষয়টি মামলাকে আরও জটিল করে তুলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে।

মাঈনুল আহসান নোবেল একটি সম্ভাবনার নাম ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন জীবন, মাদকাসক্তি, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব এবং সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা তাঁকে এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। তাঁর পতনের এই দীর্ঘ ও করুণ পথ হয়তো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রতিভা থাকলেই চলে না, প্রয়োজন চরিত্র, নিয়ন্ত্রণ আর সমাজিক সংবেদনশীলতা।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531