
তাহসান -মিথিলা
২০১৭ সালে দেশের শোবিজ অঙ্গনের আলোচিত দম্পতি তাহসান খান ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। তবে সম্প্রতি মিথিলা জানালেন, তাঁদের বিচ্ছেদের পেছনের গল্প আরও দীর্ঘ, আরও জটিল।
এশা রুশদীর ইউটিউব পডকাস্টে নিজের জীবনের এক কঠিন অধ্যায়ের কথা অকপটে তুলে ধরেন মিথিলা। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকেই তাহসানের সঙ্গে আলাদা থাকতেন। দুই বছর ধরে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন, ভেবেছেন সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন—এই সম্পর্ক আর সম্ভব নয়।
মিথিলা বলেন, “তখন আমি অল্প বয়সী মা, এক বছরের একটা বাচ্চা আমার কোলে। মানসিকভাবে এতটাই দুর্বল ছিলাম যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। শুধু সম্পর্কের শেষ নয়, আমাকে তখন মানসিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছিল।”
অর্থনৈতিক সংকটের কথা জানাতে গিয়ে মিথিলা বলেন, “২৩ বছর বয়স থেকে জীবনকে একটা ছকে ভেবে এসেছিলাম। হঠাৎ করে সব পাল্টে গেল। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে থাকতাম, কিন্তু বুঝলাম—সেই জায়গা আমার ভবিষ্যৎ নয়। চাকরি করতাম, বছরে এক-দুইটা কাজ করতাম, কিন্তু নিজের একটা গাড়িও ছিল না। আমার ও আমার বাচ্চার অভ্যাস ছিল গাড়িতে চলাফেরার, সেটাও তখন সম্ভব হচ্ছিল না।”
মিথিলা জোর দিয়ে বলেন, মেয়েদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। “মেয়েদের নিজের জায়গা থাকে না—একদিকে শ্বশুরবাড়ি, অন্যদিকে বাবার বাড়ি। এখন, অনেক বছর পর আমার নিজের একটা জায়গা হয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব আমি নিজেকেই দেব। মেয়েদের জন্য প্রথম দরকার—অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এটা না থাকলে জীবনের অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াও কঠিন হয়ে যায়,” বলেন মিথিলা।
তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ছোটবেলা থেকে তাঁর মা তাকে শিখিয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সেই শিক্ষা থেকেই তিনি পড়াশোনা ও চাকরি চালিয়ে গেছেন বিয়ের পরও। তবে তখনও তিনি অর্থনৈতিকভাবে এতটা শক্ত ছিলেন না যে সন্তানকে একা বড় করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২০১৭ সালে হঠাৎ করেই তাহসান-মিথিলা যৌথভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। মিথিলা ফেসবুকে লিখেছিলেন, “বিয়ে হওয়ার সময় আমরা দুজনেই অনেক ছোট ছিলাম, আমাদের ক্যারিয়ার একসঙ্গেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু একটা সময় এসে মনে হলো, ১১ বছর আগের মানুষটা আর এখনকার মানুষ এক থাকে না। তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো।”
তাহসানও তাঁর পোস্টে লেখেন, “সমাজ কী বলবে, এই ভয়ে অভিনয় করে সারাজীবন কাটানো—এ ব্যাপারে আমরা কেউই একমত নই। তাই আমরা নিজের ইচ্ছায় আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
একসময়ের জনপ্রিয় এই জুটির বিচ্ছেদ ভক্তদের মনে দুঃখের ছায়া ফেলেছিল। তবে বর্তমানে মিথিলা তাঁর জীবন ও ক্যারিয়ারে স্থিতিশীলতা খুঁজে পেয়েছেন। নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি বলছেন—মেয়েদের আগে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে হবে, তাহলেই তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিতে পারবে।