
পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমাইরা আসগর
পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমাইরা আসগরের পচাগলা মরদেহ ৯ মাস পর করাচির একটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ সব তথ্য—দেহ ছিল চূড়ান্ত পচনে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কালো হয়ে গিয়েছিল, মুখমণ্ডল এতটাই বিকৃত ছিল যে চিনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। শরীরের চারপাশে ছিল পোকামাকড়, আর চুলে পাওয়া গেছে বাদামি রঙের পোকা।
বাড়িওয়ালার অভিযোগেই ফাঁস রহস্য
ঘটনাটি সামনে আসে অ্যাপার্টমেন্টের বাড়িওয়ালার অভিযোগের ভিত্তিতে। হুমাইরা দীর্ঘদিন ভাড়া না দেওয়ায় এবং তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় বাড়িওয়ালা আদালতের মাধ্যমে ফ্ল্যাট খালি করতে গেলে পুলিশ সেখানে প্রবেশ করে এবং সম্পূর্ণ পচে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রথমদিকে খবর ছিল, তিনি নিয়মিত ভাড়া দিতেন। তবে পুলিশ জানায়, অ্যাপার্টমেন্টে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না, পানির পাইপ শুকিয়ে মরিচা ধরেছিল এবং খাবারের জারগুলোয় ছয় মাস আগে থেকেই পচন ধরেছিল। ব্যালকনির দরজা খোলা থাকায় বাতাস প্রবেশ করত, যে কারণে দুর্গন্ধ তীব্রভাবে ছড়ায়নি এবং নিচতলার ফ্ল্যাটগুলো খালি থাকায় কেউ টেরও পাননি।
ময়নাতদন্তে গা শিউরে ওঠা তথ্য
প্রকাশিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মরদেহ ছিল ‘অগ্রসর পচনের স্তরে’। শরীরের বেশিরভাগ অংশে পেশি ছিল না, হাড় স্পর্শ করলেই ভেঙে যাচ্ছিল। মস্তিষ্ক পচে কালো জৈব পদার্থে পরিণত হয়েছিল। দেহে ম্যাগট বা শুঁয়াপোকা ছিল না, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে—পরিবেশ শুকনো ও স্থির ছিল দীর্ঘ সময়।
মৃত্যুর কারণ এখনো অজানা
মরদেহের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে টক্সিকোলজি ও ডিএনএ বিশ্লেষণ চলছে।
করাচির ডিআইজি সৈয়দ আসাদ রেজা বলেন, হুমাইরার ফোন কল রেকর্ড অনুযায়ী সর্বশেষ কল করা হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। প্রতিবেশীরাও জানান, তাঁকে শেষবার দেখা গেছে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের দিকে।
পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব, মরদেহ নিতে অনীহা
শুরুতে হুমাইরার পরিবার মরদেহ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছিল। পরে ভাই নাভিদ আসগর করাচিতে এসে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মরদেহ বুঝে নেন। তিনি জানান, ‘হুমাইরা সাত বছর আগে করাচিতে চলে আসার পর পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
কে ছিলেন হুমাইরা আসগর?
লাহোরের বাসিন্দা হুমাইরা মিডিয়ায় ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৫ সালে। ‘জাস্ট ম্যারেড’, ‘এহসান ফারামোশ’, ‘গুরু’, ও ‘চল দিল মেরে’ নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। তিনি চলচ্চিত্র ‘জালিবি’ ও ‘লাভ ভ্যাকসিন’–এ অভিনয় করেন এবং ২০২২ সালে এআরওয়াই ডিজিটালের রিয়েলিটি শো ‘তমাশা ঘর’-এ অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন। ২০২৩ সালে পেয়েছিলেন 'ন্যাশনাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডস'–এর সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী পুরস্কার।