
পানির ট্যাংক
বন্যা, দুর্যোগ কিংবা পানি সংকটের সময় পানির ট্যাংক পরিষ্কার করা কিংবা জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ব্লিচিং পাউডার বা ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এটি জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও শেওলা ধ্বংসে কার্যকর হলেও সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
⚠️ ব্লিচিং পাউডার: কখন বিপজ্জনক
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লিচিং পাউডার পানিতে মেশালে ক্লোরিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা অতিরিক্ত হলে মানবদেহে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
এতে হতে পারে:
-
ত্বকে জ্বালা ও চুলকানি
-
চোখে পানি পড়া ও ঝাপসা দেখা
-
শ্বাসকষ্ট ও বমি
-
মারাত্মক ক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্লোরিন গ্যাস গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও হাঁপানির রোগীদের মধ্যে।
এ ছাড়া ভিনেগার বা অ্যাসিডিক কোনো ক্লিনারের সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মেশালে ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হয়, যা বিষাক্ত এবং প্রাণঘাতী।
ধাতব ট্যাংক বা পাইপে বারবার বেশি মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে তা ক্ষয়ও করতে পারে।
✅ নিরাপদ ব্যবহারে করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক মাত্রা ও নিয়ম মেনে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলেই এটি নিরাপদ। নিচে দেওয়া হলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
-
প্রতি ১,০০০ লিটার পানির জন্য ৫০-১০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার যথেষ্ট।
-
গরম পানিতে ব্লিচিং পাউডার গুলিয়ে ট্যাংকে ঢালতে হবে।
-
মিশ্রণ দেওয়ার পর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা রেখে, তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
-
পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানি অন্তত তিন-চারবার ভরে ফেলে দিয়ে ব্যবহার শুরু করা উচিত।
-
ব্যবহারকালে মাস্ক ও গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে।
? সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই না বুঝে বা মাত্রা না মেনে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করেন, যা উল্টো স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনে। তাই সরকারি বা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে গিয়ে যদি আরও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, তা কারও কাম্য নয়।
? জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের আগে তার মেয়াদ ও পরিমাণ দেখে নেওয়া এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্লিচিং পাউডার সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি দুর্যোগকালে পানি পরিশুদ্ধকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। তবে এর ভুল বা অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্য এবং ট্যাংকের গঠন—দুইয়েরই ক্ষতি করতে পারে। তাই নিরাপত্তা ও সচেতন ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়াই এখন সময়ের দাবি।