পুরুষ বন্ধ্যত্ব
আমাদের দেশে বন্ধ্যত্ব একটি সামাজিক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রে ৮ থেকে ১০ শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যত্বে ভোগেন। আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা কম নয়। কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ–পদ্ধতি ব্যবহার না করে স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত মেলামেশার পরও যদি এক বছর পর্যন্ত সন্তান ধারণ করতে ব্যর্থ হন, তাকে সাধারণভাবে বন্ধ্যত্ব বলা যেতে পারে। এর জন্য ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর, ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর এবং বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে উভয়ের সমস্যা থাকতে পারে।
আমাদের দেশে প্রায়ই বন্ধ্যত্বের জন্য শুধু স্ত্রীর চিকিৎসা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ কারণে অনেক পুরুষের সমস্যা অগোচরেই রয়ে যায়। আবার সমস্যা শনাক্ত হওয়ার পর যেসব পুরুষ চিকিৎসার জন্য আসেন, তাঁদের অনেকে পারিবারিক অশান্তি ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু জানতে হবে, বেশির ভাগ রোগেরই চিকিৎসা আছে এবং বন্ধ্যত্ব যদি পুরুষের হয়, তবে তাঁর চিকিৎসা দেবেন অবশ্যই ইউরোলজিস্ট ও অ্যান্ড্রোলজিস্ট। আর স্ত্রীর সমস্যা থাকলে গাইনিকোলজিস্ট ও অবস্টেট্রিশিয়ান বা হরমোন–বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা করবেন।
প্রায়ই বন্ধ্যত্বের জন্য শুধু স্ত্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ কারণে অনেক পুরুষের সমস্যা অগোচরেই রয়ে যায়।
করণীয়
বীর্য পরীক্ষা ও একটি হরমোন টেস্ট করে সহজেই পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। স্ত্রীর যদি কোনো সমস্যা না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও দু-একটা পরীক্ষা করে পুরুষের চিকিৎসা শুরু করা হয়।
দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু আইভিএফ সেন্টার তৈরি হয়েছে, যেখানে রোগীদের প্রথমেই আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির জন্য প্রলুব্ধ করা হয়। আইভিএফ হলো চিকিৎসার সর্বশেষ ধাপ। এর আগেও অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক অসুখ ধরে চিকিৎসা দিলে স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণ সম্ভব হয়।
মনে রাখতে হবে, আইভিএফ একটি ব্যয়বহুল, জটিল ও দীর্ঘ চিকিৎসাপদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে আরও চিকিৎসা করা সম্ভব।
কারণ
পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুসংখ্যা কম থাকলে, শুক্রাণুর মুভমেন্ট বা চলন কম কিংবা দুর্বল হলে অথবা দুটি সমস্যাই একসঙ্গে থাকলে বন্ধ্যত্ব হয়। এসব কারণে সন্তান হয় না। সিমেন অ্যানালাইসিস করে এ সমস্যা ধরা যায়।
অনেক সময় পুরুষের বন্ধ্যত্ব হাই গ্রেড ভেরিকোসিলের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতে পারে। ভেরিকোসিল অণ্ডকোষের একটি অসুখ। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোসার্জিক্যাল ভেরিকোসিলেকটমি করা হয়।
শুক্রাণুর চলন বাড়ানোর জন্য কিছু ওষুধ আছে। কিন্তু অ্যাজোস্পার্মিয়া মানে বীর্যে কোনো শুক্রাণুই নেই। এটি প্রাইমারি টেস্টিকুলার ফেইলিউর (অর্থাৎ অণ্ডকোষে শুক্রাণু তৈরি হয় না) অথবা শুক্রাণু বহনকারী নালিতে ব্লক থাকার জন্যও হতে পারে।
এসব সমস্যায় চিকিৎসা আছে। তা ছাড়া অণ্ডকোষ ম্যাপিং করে কোথাও কয়েকটা শুক্রাণু পাওয়া গেলে, তা ক্রায়োপ্রিজার্ভ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যাঁদের হাই গ্রেড ভেরিকোসিল আছে, তাঁদের আগে মাইক্রোসার্জিক্যাল ভেরিকোসিলেকটমি করাতে হবে। এতে আইভিএফ দরকার হলেও এর সাফল্য বেড়ে যায়।
অধ্যাপক ডা. আজফার উদ্দীন শেখ, বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজিও অ্যান্ড্রোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ