
ফারিয়া
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা এলাকায় সংঘটিত একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের পর অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কাওয়ালীন নাহার জানান, দুপুরে জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নুসরাত ফারিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এর আগে, ১৮ মে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে অর্থায়ন করেছেন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নুসরাত ফারিয়াসহ ২৮৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, এই আন্দোলনের সময় ভাটারা থানাধীন এলাকায় একটি হত্যাচেষ্টা সংঘটিত হয়, যার পেছনে আসামিদের ভূমিকা ছিল।
চলচ্চিত্র জগতের আরও ১৭ জন অভিনয়শিল্পী এই মামলায় আসামি হয়েছেন—তাদের মধ্যে রয়েছেন অপু বিশ্বাস, সুবর্ণা মোস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, মেহের আফরোজ শাওন, সাইমন সাদিক ও জায়েদ খানসহ অনেকে।
নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান, আদালতে বিশেষ সাবমিশনের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
এর আগে সোমবার (১৯ মে) তাকে আদালতে হাজির করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং জামিন শুনানির জন্য ২২ মে দিন ধার্য করা হয়।
গ্রেপ্তার নিয়ে প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক:
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “এই গ্রেপ্তার একটি বিব্রতকর ঘটনা। তদন্ত শেষ না করে গ্রেপ্তার একপ্রকার ওভার নারভাসনেসের পরিচয়।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নুসরাত আইনি প্রতিকার পাবেন এবং এই ধরনের মামলাকে আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “তার নামে মামলা থাকলে কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। জামিনযোগ্য অপরাধ হলে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “এই ঘটনা বর্তমান শাসকদের পুরনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি। এটি জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা মাত্র।”
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “নুসরাতের গ্রেপ্তার গভীর উদ্বেগজনক। এখন মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ হলেই মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।”
নুসরাত ফারিয়ার জামিনে মুক্তি প্রাপ্তি সাময়িক স্বস্তি আনলেও, পুরো মামলাটি নিয়ে দেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপরই এখন নির্ভর করছে এর চূড়ান্ত পরিণতি।