ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। দুই দেশের এই সামরিক সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি।

ইরানে নিহত বেড়ে ২২৪

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানে রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৪ জনে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১,২৭০ জন। নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। বেশ কয়েকটি শহরের মসজিদ, মেট্রো স্টেশন ও স্কুলকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।

ইরানের কর্তৃপক্ষ জানায়, ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী।

ইসরায়েলে নিহত ২০, শিশু তিনজন

বিবিসি ও সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। ইসরায়েলি জাতীয় পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানায়, সোমবার মধ্য ইসরায়েলে হামলায় পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন নারী এবং তিনজন শিশু।

এছাড়া ইরানের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

হামলা চলছে, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলো প্রতিহত করা হয়েছে। তবে পুরো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা "অভেদ্য নয়" বলে স্বীকার করেছে আইডিএফ।

তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছে।

জেরুজালেম থেকে সিএনএনের এক প্রযোজক জানিয়েছেন, তিনি সাইরেন ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র চলাচলের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা মধ্য ইরানে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী এসব স্থাপনাগুলো থেকেই ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’’

মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ঘটনায় সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে তাৎক্ষণিক হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

এই সংঘর্ষ ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বেসামরিক লোকজনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে এই সংঘাত আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব গোটা অঞ্চলে পড়বে।

চার দিনের টানা হামলায় মধ্যপ্রাচ্য কার্যত এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের কোনো পক্ষই এখনো পিছু হটার ইঙ্গিত দেয়নি। হামলা ও পাল্টা হামলায় প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা। এখনই এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে, আগামীর অনিশ্চয়তা ভয়াবহ হতে পারে।