ঢাকা,  রোববার
১৩ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

‘আমি রাগ করি না’—এটা কি ভালো কিছু

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১০ জুলাই ২০২৫

‘আমি রাগ করি না’—এটা কি ভালো কিছু

শান্ত মেয়ে

বইয়ের লেখক স্যাম পার্কার বলছেন, যারা মনে করেন "আমি রাগ করি না", একসময় এই ‘রাগ না করার’ মূল্য দিতে হয় চরমভাবে। নিজের অভিজ্ঞতা, থেরাপিস্টদের পর্যবেক্ষণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে লেখা বইয়ে পার্কার দেখিয়েছেন, রাগ দমন দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে উদ্বেগ, মানসিক অস্থিরতা ও সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করে।

রাগ চেপে রাখার ফলাফল ভয়াবহ

পার্কার একসময় নিজেকে ভাবতেন রাগের ঊর্ধ্বে একজন মানুষ হিসেবে। বলতেন, “আমার মনে হতো, জাগতিক কিছুই আমাকে স্পর্শ করতে পারে না।” কিন্তু ত্রিশের পর বুঝতে পারেন, যে অস্বস্তি, উদ্বেগ বা অশান্তি তিনি বছরের পর বছর ধরে অনুভব করছেন, তার মূল উৎস আসলে চেপে রাখা রাগ

যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, ঠান্ডা পানির গোসল—কিছুতেই উপশম আসছিল না। একসময় তাঁর ভেতরে সঞ্চিত ক্রোধ আগ্নেয়গিরির লাভার মতো বিস্ফোরিত হতে থাকে।

রাগ প্রকাশ না করাই ক্ষতিকর

অনেকেই রাগ প্রকাশকে খারাপ বা নেতিবাচক আচরণ বলে মনে করেন। কিন্তু পার্কারের মতে, রাগ–ক্রোধও মানুষের স্বাভাবিক আবেগ, ঠিক যেমন ভালোবাসা বা দুঃখ। এটিকে চেপে রাখলে তা মানসিকভাবে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

রাগ ≠ সহিংসতা

পার্কার স্পষ্ট করে বলেন, রাগ মানেই সহিংসতা নয়। অনেকেই রাগকে আগ্রাসনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন, ফলে নিজেদের ভেতরে তৈরি হওয়া রাগও প্রকাশ করেন না। কিন্তু এর ফলে সমস্যা আরও বাড়ে।

নীরবতা বা আত্মসংযমের মুখোশ পরে থাকা ব্যক্তি একসময় মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভোগেন।

রাগের ধরন

পার্কার রাগকে ভাগ করেছেন দুই প্রকারে—

  1. স্বভাবজাত রাগ (Characteristic): জন্মগত ও পরিবেশগত প্রভাব। যারা সহজে মেজাজ হারান।

  2. পরিস্থিতিগত রাগ (Situational): হতাশা বা নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতিক্রিয়া।

পরিস্থিতিগত রাগ এড়ানো যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আপনি কীভাবে তা প্রকাশ করছেন? সময়মতো প্রকাশ হচ্ছে, নাকি বছরের পর বছর চাপা পড়ছে?

রাগ প্রকাশ না করলে যা ঘটে

রাগ চেপে রাখলে তা পরিণত হয় দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগে। ছোট একটি বিষয়েই হয়তো সেই জমে থাকা রাগ ফুলেফেঁপে ওঠে, হয়ে দাঁড়ায় অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে সমাজ নির্ধারিত আচরণগত পার্থক্য আরও জটিলতা তৈরি করে।

নারীদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়, রাগ দেখানো অনুচিত। ফলে তাঁরা রাগের বদলে কান্না দিয়ে আবেগ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে ছেলেরা রাগ প্রকাশে স্বাধীন হলেও, কীভাবে তা সামলাতে হয়, তা শেখানো হয় না। ফলে রাগ নিয়ে সবার ভেতরেই তৈরি হয় বিভ্রান্তি ও নেতিবাচকতা।

রাগ প্রকাশের স্বাস্থ্যকর উপায়

রাগ প্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষের মনে থাকা উচিত—এটি যেন ব্যক্তির ওপর নয়, পরিস্থিতির প্রতি হয়

  • বালিশে ঘুষি মারা

  • জোরে চিৎকার করা

  • বক্সিং, দৌড়, নাচ

  • জার্নালিং বা ছবি আঁকা

এসব উপায় সৃজনশীল এবং সীমিত সময়ে উত্তেজনা কমাতে কার্যকর

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময় রাগের পরে

রাগের সময় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। সময় নিয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে তা আরও বাস্তবসম্মত হয়।
অনেকেই সম্পর্ক রক্ষার কথা ভেবে রাগ চেপে রাখেন, অথচ সঠিকভাবে রাগ প্রকাশ করলে সম্পর্ক আরও সুস্থ ও স্বচ্ছ হতে পারে

রাগ চাপা দেওয়া নয়, বরং সঠিকভাবে রাগ প্রকাশ করাই মানসিক সুস্থতার চাবিকাঠি। রাগের সঙ্গে গোঁজামিল দিয়ে চলা নয়—বরং তা বোঝা, প্রকাশ করা, এবং পরবর্তীতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই আমাদের করে তোলে পরিণত মানুষ। স্যাম পার্কারের বই তাই শুধু রাগ নয়, আত্ম–বোঝাপড়ার এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531