ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৭ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি কে কোন প্রস্তাব দিলো

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৯:২৩, ১৬ জুলাই ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি কে কোন প্রস্তাব দিলো

বিএনপি এনসিপি

রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়া গেলেও রইল মতপার্থক্য

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনর্বহারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সার্বিকভাবে ঐকমত্য গড়ে উঠলেও, সরকারের কাঠামো এবং প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে স্পষ্ট মতপার্থক্য। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে গঠিত সংলাপ পর্বে অংশ নেওয়া দলগুলো পৃথক পৃথকভাবে নিজস্ব প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তবে কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তাবেও ঐকমত্য হয়নি।

বিএনপির প্রস্তাব: পাঁচ স্তরবিশিষ্ট বিকল্প পদ্ধতি

গত রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ পাঁচ ধাপে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের একটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব অনুযায়ী:

১. রাষ্ট্রপতি নেতৃত্ব দেবেন আলোচনা প্রক্রিয়ায়, যেটি হবে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে।

২. ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপতিকে সভাপতি করে একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে (প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার)। তবে রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে না।

  1. প্রয়োজনে তৃতীয় বৃহৎ দলের প্রতিনিধি যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার কার্যকর হবে।

৪. সমঝোতা না হলে ৫% ভোট পাওয়া সব দলের একজন করে প্রতিনিধি দিয়ে বৃহত্তর কমিটি গঠনের প্রস্তাব, যেখানে রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে।

৫. সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী আগের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া। যদিও রাষ্ট্রপতিকে এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখার বিষয়ে দলগুলোর একমত থাকলেও, শেষ বিকল্প হিসেবে তাঁর ভূমিকাও বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।


জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাব: তিনটি পৃথক কাঠামো

জামায়াত তিনটি ভিন্ন রূপরেখা উপস্থাপন করেছে:

১. বাছাই কমিটি ভিত্তিক পদ্ধতি:

  • প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি (প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা)

  • সরকারি ও বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় প্রার্থীর নাম জমা দেবে (৫+৫+২ জন)

  • আলোচনার ভিত্তিতে একজনকে বেছে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ

২. সংসদীয় কমিটি মডেল:

  • স্পিকারের তত্ত্বাবধানে ১১ সদস্যের সংসদীয় কমিটি

  • রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে সদস্য বাছাই

  • একমত না হলে সর্বমোট ১৩ জন নির্দলীয় প্রার্থী থেকে একজন নির্বাচিত হবে

৩. ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল:

  • রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বাদ দিয়ে আগের মডেলেই ফিরে যাওয়ার সুপারিশ

  • প্রয়োজনে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার গঠন


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রস্তাব: সর্বদলীয় সংসদীয় পদ্ধতি

গত মে মাসে এনসিপি একটি বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দেয়:

  • ১১ সদস্যের সর্বদলীয় কমিটি গঠন, ভোটের অনুপাতে সদস্য বাছাই

  • সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যই যোগ্য বিবেচিত

  • সরকার, প্রধান বিরোধী দল ও অন্যান্য বিরোধী দল মোট ৯ জন প্রার্থী প্রস্তাব করবে

  • সকল প্রস্তাবনাকে জনগণের কাছে প্রকাশযোগ্য করতে হবে

নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্বাচনের দুই স্তর:
১. সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে ৮-৩ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন
২. একমত না হলে ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ভোটে উপদেষ্টা নির্বাচন


ঐকমত্যের বর্তমান অবস্থা

  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তাবেও রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়নি

  • আগামী সপ্তাহে আলোচনা অব্যাহত থাকবে

  • লক্ষ্য: বিশ্বস্ত, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন প্রশাসন গঠন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে মূল ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। বিএনপি বিকল্পধর্মী ধাপে ধাপে সমাধানের প্রস্তাব দিলেও জামায়াত প্রস্তাব দিয়েছে শক্তিশালী বিচার ও সংসদীয় কাঠামো নির্ভর বাছাই ব্যবস্থার। এনসিপি পছন্দের ক্রমানুসারে ভোটিংয়ের মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রকাশ্য প্রক্রিয়ার উপর জোর দিয়েছে।

আসন্ন বৈঠকে এই প্রস্তাবগুলোর উপর ভিত্তি করে সমঝোতার একটি খসড়া প্রস্তুত হতে পারে—যা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531