
সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম কঠোর বিচারব্যবস্থা বহাল রাখা সৌদি আরব এবার মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত ইথিওপিয়ার দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, খলিল কাসিম মুহাম্মদ ওমর ও মুরাদ ইয়াকুব আদম সিয়ো নামের ওই দুইজন হাশিশ পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।
এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে চলতি ২০২৫ সালে সৌদি আরবে মোট ১৮৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো, যার মধ্যে ১০১ জনই বিদেশি নাগরিক। আন্তর্জাতিক মহলে এরই মধ্যে এ সংখ্যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ঘটনাকে ‘চরম অমানবিক’ ও ‘অন্যায্য বিচার ব্যবস্থার’ ফলাফল বলে মন্তব্য করেছে। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার উপ-পরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন,
“আমরা একটি ভয়াবহ প্রবণতা দেখছি, যেখানে বিদেশিদের এমন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, যা কখনোই সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় পড়া উচিত নয়।”
বিদেশিদের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে সৌদির বিচারব্যবস্থা
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রিভ বলছে, ২০২৫ সালে সৌদিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি নাগরিক, যাদের অধিকাংশই মাদক–সংক্রান্ত মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। রিপ্রিভের ‘মধ্যপ্রাচ্য মৃত্যুদণ্ড প্রকল্পের’ প্রধান জিদ বাসিউনি বলেন,
“ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান উদার রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইলেও বাস্তবতা ভিন্ন। আপনি মরুভূমিতে রেভ পার্টি করতে পারেন, কিন্তু হাশিশ খেলে মৃত্যুদণ্ড পাবেন। এটি নিপীড়নেরই প্রতিচ্ছবি।”
বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
অ্যামনেস্টি ও রিপ্রিভের মতে, সৌদি আরবে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, আর বিদেশি নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ—দুই মিলিয়ে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন। বিশেষত মাদক–সংক্রান্ত মামলায় মৃত্যুদণ্ডের হার যেভাবে বাড়ছে, তা মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
মৃত্যুদণ্ডের রেকর্ড বাড়ছে
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী,
-
২০২২ সালে সৌদিতে ১৯৬ জন,
-
২০২৩ সালে ১৭০ জন,
-
আর ২০২৪ সালে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
চলতি ২০২৫ সালের অর্ধেকেই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা প্রায় ২০০ ছুঁই ছুঁই, যা সৌদি আরবকে বিশ্বের শীর্ষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশগুলোর কাতারে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলেও সৌদি আরবের বাস্তবতা ক্রমেই আরও কঠোর হয়ে উঠছে। মাদক মামলায় বিদেশিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে যখন দেশটি সংস্কারের কথা বলছে, তখন এমন ঘটনা সৌদি আরবের প্রকৃত চিত্র ও শাসনব্যবস্থার প্রশ্ন তুলছে বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।