
লাল চাঁদ
‘পরিবারের একমাত্র আয়ের লোককে ওরা খুন করেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার? দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কী হবে?’—বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন লাল চাঁদের স্ত্রী লাকি বেগম। ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় নির্মমভাবে খুন হন লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)।
গতকাল শুক্রবার সকালে নিহত লাল চাঁদের মরদেহ ঢাকা থেকে বরগুনার ইসলামপুর গ্রামে এনে মায়ের কবরের পাশে দাফন করেন স্বজনেরা। সেখানে চলছে শোকের মাতম। নিহতের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনেরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
লাল চাঁদ ছিলেন ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাবাকে সাত মাস বয়সে হারিয়ে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানেই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান চালাতেন তিনি। ব্যবসা ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত।
স্বজনদের দাবি, স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী পক্ষ মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় তাঁর দোকানে তালা মারে তারা। গত বুধবার বিকেলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে তাকে আটকে রেখে চাঁদা চাওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
লাল চাঁদের ১০ বছরের ছেলে সোহান ও ১৪ বছরের মেয়ে সোহানা—দুজনেই বিদ্যালয়পড়ুয়া। তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মা লাকি বেগম। হুমকি অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। লাল চাঁদের বোন ফাতিমা বলেন, “ঘটনার দিন ভাই বলেছিল, ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।’ সেটাই সত্যি হলো।”
শনিবার দুপুরে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা পরিবারটির খোঁজ নিতে যান। তিনি জানান, লাল চাঁদ দলীয় কর্মী ছিলেন এবং পরিবারটির পাশে আইনগত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, পরিবারটিকে সাধ্যমতো সহায়তা দেওয়া হবে এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।
নিহত লাল চাঁদের কন্যা সোহানা সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আমার বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের পরিবারটিকে বাঁচান।”