ঢাকা,  সোমবার
০৭ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

আপনার সঞ্চয় কতটা নিরাপদ? ভালো ব্যাংক বাছাইয়ের উপায় ও সতর্কতা

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ৬ জুলাই ২০২৫

আপনার সঞ্চয় কতটা নিরাপদ? ভালো ব্যাংক বাছাইয়ের উপায় ও সতর্কতা

ব্যাংকে আমানত

আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর আগে মানুষ কষ্টার্জিত সম্পদ রক্ষায় নির্ভর করত গোপন কৌশলের ওপর। কেউ সোনা-রূপা লুকিয়ে রাখতেন, কেউ মাটির নিচে অর্থ পুঁতে রাখতেন। লোককথায় এসব লুকোনো ধন-সম্পদকেই ডাকা হতো 'যখ' নামে।

তবে সময়ের বিবর্তনে এই ধারা পাল্টে যায়। আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা মানুষকে নিরাপদে সম্পদ রাখার একটি বিকল্প পথ দেয়। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—সব ব্যাংক কি সমান নিরাপদ? যে ব্যাংকে টাকা রাখছেন, সেটি ডুবে গেলে কী হবে আপনার সঞ্চয়ের?

ব্যাংক বাছাইয়ের গুরুত্ব

যদিও বাংলাদেশে ব্যাংক-ডুবে যাওয়ার ঘটনা বিরল, তবু একেবারে যে ঘটে না তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পেতে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা আমাদের স্মরণে আছে। তাই টাকা রাখার আগে ভালো ব্যাংক চিনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে চিনবেন ভালো ব্যাংক?

১. শেয়ারবাজারে অবস্থান ও আস্থা

ভালো ব্যাংকগুলো সাধারণত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত থাকে এবং তাদের কার্যক্রম ও আর্থিক তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করে। একটি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে সক্রিয় উপস্থিতি মানে সাধারণ মানুষের আস্থা বেশি।

২. কাস্টমার বেইজ ও গ্রাহকবান্ধব সেবা

বিশ্বস্ত ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব কোন ব্যাংকে রয়েছে, তা দেখে সহজেই বোঝা যায় কোন ব্যাংক ভালো। পাশাপাশি, ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন ব্যাংকিং, ATM কাভারেজ ইত্যাদি সুবিধা থাকলে তা গ্রাহকবান্ধবতার নির্দেশক।

৩. গ্রাহক অভিযোগ ও সন্তুষ্টি

যে ব্যাংকে কম অভিযোগ আসে এবং যাদের গ্রাহকসেবা ভালো, সেই ব্যাংক বেশি নির্ভরযোগ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রিভিউ সাইট বা সংবাদ প্রতিবেদন থেকে এসব জানা সম্ভব।

বিনিয়োগ বনাম সঞ্চয়: ব্যাংকে টাকা রাখা মানেই বিনিয়োগ

ব্যাংকে টাকা রাখা কেবল সঞ্চয় নয়, এক ধরনের বিনিয়োগও। আপনি টাকা রাখেন, ব্যাংক সেই টাকা ঋণ দেয়, এবং মুনাফা হিসেবে একটি অংশ আপনাকে ফেরত দেয়। তবে অধিক মুনাফার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে যাওয়া বিপজ্জনক।

সতর্কতা: বেশি মুনাফার লোভে পা দেবেন না

যেসব ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল, তারাই সাধারণত বেশি মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণ করে। কিন্তু পরে দেখা যায় তারা চাইলেই টাকা ফেরত দিতে পারে না। তাই অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ হারে মুনাফার প্রলোভনে না পড়াই ভালো।

খারাপ ব্যাংকের চিহ্ন কী?

১. উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ (NPL)

যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বেশি, অর্থাৎ গ্রাহকদের দেওয়া ঋণের বড় অংশ ফেরত আসে না, সেই ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ। ভালো ব্যাংকে NPL হার সাধারণত ৫ শতাংশের নিচে থাকে।

২. ADR অনুপাত

Advance to Deposit Ratio (ADR) অর্থাৎ আমানতের তুলনায় কতটুকু ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সাধারণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে ADR অনুপাত হতে হবে সর্বোচ্চ ৮৭% এবং ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯২%। এই সীমা অতিক্রম করা মানে ঝুঁকির আশঙ্কা বেশি।

৩. নতুন রেটিং সূচকের ভ্রান্তি

এক সময় ক্যামেলস রেটিং ও ক্রেডিট রেটিং দেখে ব্যাংকের অবস্থা বোঝা যেত। তবে বর্তমানে অনেক দুর্বল ব্যাংকও ভালো রেটিং পাচ্ছে, রেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায়। তাই এই সূচক এখন খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়।

তথ্য যাচাইয়ের কৌশল

  • ব্যাংকের নাম দিয়ে গুগল সার্চ করুন এবং সাম্প্রতিক সংবাদ পড়ুন।

  • সংবাদপত্রে প্রকাশিত খেলাপি ঋণের তথ্য খতিয়ে দেখুন।

  • সামাজিক মাধ্যমে গ্রাহকদের মন্তব্য খেয়াল করুন।

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং আর্থিক সূচক দেখুন।

আপনার সঞ্চয় শুধু টাকা নয়, এটি আপনার জীবনের নিরাপত্তা। তাই ব্যাংক বাছাইয়ে আবেগ নয়, দরকার তথ্যভিত্তিক বাছাই। স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা এবং গ্রাহকসেবার মান বিবেচনায় রেখে ভালো ব্যাংক বেছে নিন। কারণ ভুল ব্যাংকে টাকা রাখার অর্থ হতে পারে নিজের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বিপন্ন করা।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531