
দুবাইয়ে স্বর্ণের বাজার
দীর্ঘ সময় রেকর্ড দামে থাকার পর অবশেষে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে দুবাইয়ের স্বর্ণবাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে দুবাইয়ের স্থানীয় বাজারেও। শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে প্রতিটি ক্যারেটের স্বর্ণেই দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য মূল্যপতন।
দুবাইয়ে এখন ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি গ্রাম মূল্য ৪০৬ দিরহামে, ২২ ক্যারেট ৩৭৬ দিরহাম, ২১ ক্যারেট ৩৬০.৫০ দিরহাম এবং ১৮ ক্যারেট ৩০৯ দিরহামে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় এই দাম যথেষ্ট কম, বিশেষ করে যখন গত মাসেও বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ৪০০ দিরহামের গণ্ডিও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সুদের হারের প্রভাব: স্বর্ণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা
মূল্যপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সতর্ক অবস্থান। ফেড এখনই সুদের হার কমাতে আগ্রহী নয়, বরং সম্ভাব্য বৃদ্ধির কথাও বলছে। ফলে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে। কারণ সুদের হার বাড়লে স্বর্ণে বিনিয়োগ তুলনামূলক কম লাভজনক হয়ে পড়ে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ডের প্রতি আউন্স দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ ডলার, যা ০.৫ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে প্লাটিনাম, যেটি এক দশকের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছিল, সেটিও কিছুটা হোঁচট খেয়েছে।
ব্যাংকগুলোর সতর্কতা: সামনে বড় ধস?
বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ২০২৬ সালের শুরু পর্যন্ত স্বর্ণের দামে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পতন ঘটতে পারে। তারা বলছে, দাম ৩ হাজার ডলারের নিচেও নেমে যেতে পারে, যা হবে সাম্প্রতিক বছরের সবচেয়ে বড় ধসের ইঙ্গিত।
এই পতনের সম্ভাব্য প্রভাব পড়বে দুবাইয়ের বাজারেও। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, তখন ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ৩০০ দিরহামের নিচে নামতে পারে।
বাজারের মনস্তত্ত্ব: ‘গোল্ডেন সুযোগ’ আসছে?
দুবাইয়ের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, “এই প্রথম কোনো বড় ব্যাংক বলছে স্বর্ণের দাম বেশি হয়ে গেছে। সবাই ভাবছিল দাম আরও বাড়বে, এখন ঠিক উল্টো কথা শোনা যাচ্ছে।” ফলে বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে—এখন কিনবেন, নাকি আরও অপেক্ষা করবেন?
অনেকেই মনে করছেন, যদি দাম আরও কমে, তাহলে বিয়ের মৌসুম কিংবা উৎসবের সময়ে স্বর্ণ কেনার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য এটি হতে পারে বহু প্রতীক্ষিত 'গোল্ডেন সুযোগ'।
বিশ্লেষকদের পরামর্শ: ধৈর্য ধরলেই লাভ?
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বর্ণের বাজার এখনো অস্থিরতায় ভরা। তবে যারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করেন, তাদের জন্য সামনে আরও কম দামে গহনা কেনার সুযোগ আসতে পারে। এখন সব নির্ভর করছে বিশ্বব্যাপী সুদের হার, ডলার মূল্য এবং ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।
শেষ কথা: যারা স্বর্ণ কিনতে প্রস্তুত, তাদের সামনে এখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত—এই দামেই কিনবেন, না কি আরও অপেক্ষা করে বড় ছাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? বাজার পরিস্থিতি বলছে, হুট করে দাম বাড়বে না। বরং এবার হয়তো সত্যিই আসছে ‘গোল্ডেন সময়’।