
পাকিস্তানের লাহোর
পাকিস্তানের লাহোর শহরে ভয়ঙ্কর এক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি পোষা সিংহ ব্যস্ত রাস্তায় এক নারী এবং তার দুই শিশুকে তাড়া করেছে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে দেশজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে লাহোর পুলিশ।
রাতের আঁধারে রাস্তায় সিংহের হামলা
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে একটি আবাসিক এলাকার বাড়ির বেড়া টপকে ১১ মাস বয়সী একটি পুরুষ সিংহ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এ সময় এক নারী তার দুই শিশুকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছিলেন। নাটকীয় ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হঠাৎ করেই সিংহটি দেয়াল টপকে বের হয়ে ওই নারীর পেছনে ধাওয়া করে।
একপর্যায়ে সিংহটি মহিলার পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দুই শিশু—একজন ৫ বছর বয়সী ও অন্যজন ৭ বছর বয়সী—কেও আক্রমণের চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্ধার করে।
আহতরা আশঙ্কামুক্ত, মালিক গ্রেপ্তার
আহত নারী ও দুই শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এখন আশঙ্কামুক্ত। পুলিশ জানায়, সিংহটির মালিক ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং হামলা দেখে মজা পাচ্ছিলেন। এমন অমানবিক আচরণের কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (অপারেশনস) জানান, ঘটনার পরপরই সিংহ ও তার মালিকপক্ষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে এবং সিংহটিকে উদ্ধার করে। বর্তমানে সিংহটিকে একটি বন্যপ্রাণী পার্কে রাখা হয়েছে।
লাইসেন্স ছাড়া সিংহ পালন: আবারও আলোচনায়
পাঞ্জাব প্রদেশে বিদেশি ও হিংস্র প্রাণী পোষার প্রবণতা নতুন নয়। বিশেষ করে সিংহকে "ক্ষমতার প্রতীক" হিসেবে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি বাড়িতে পালন করে থাকেন। কিন্তু এর ফলে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে লাহোরের আরেকটি ঘটনায় একটি প্রাপ্তবয়স্ক সিংহ পালিয়ে গিয়েছিল, পরে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে প্রাণ হারায়। ওই ঘটনার পর প্রাদেশিক সরকার সিংহ পালন, প্রজনন এবং বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়ন করে। নতুন আইনে আবাসিক এলাকায় হিংস্র প্রাণী রাখার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের বিধান রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনা দেখিয়ে দিল, আইন থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়ে গেছে। জনসাধারণ এখন আরও কঠোর নজরদারি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চাচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে এমন ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।