
হাসপাতালে শুধু লাশ
ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলের বর্বরোচিত বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাতে মধ্য গাজার আল–আহলি আরব হাসপাতালে হামলা চালিয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটায় ইসরায়েল। এর আগে ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা ‘নিরাপদ’ ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে বোমা হামলায় ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর ওই হাসপাতালের বহুতল ভবনটি জ্বলছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। সেখানে থেকে ভেসে আসছে আহত ব্যক্তিদের আর্তচিৎকার।
ইসরায়েলের এই হামলার জন্য জাতিসংঘসহ মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন।
হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন এক হামলা চালায়। এরপর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেন, এটি ‘গণহত্যা’। এই পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’।
হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ’ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ের এরদোয়ান ইসরায়েলের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন ন্যুনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল তা গাজায় হাসপাতালে হামলা সর্বশেষ উদাহরণ।
গাজার আল–আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’।
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। জঘন্য এই অপরাধের মাধ্যমে ইহুদী এই রাষ্ট্রটি আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকাতেই তুলে ধরেছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এই হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
আরব লীগও এই হামলা নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে এই ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে।
এদিকে গাজার হাসপাতালে হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এদিকে ইসরায়েলের মিত্র দেশ কানাডা গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি আছে। কোনো হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
গাজার হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে ইসরায়েল সফরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে গাজায় বর্বরোচিত হামলার প্রতিক্রিয়ায় জর্ডানে ফিলিস্তিনির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসির সঙ্গে তাঁর যে নির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে।
ইসরায়েল সফর শেষ করে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যাওয়ার কথা ছিল বাইডেনের। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল তাঁর।
হাসপাতালে ইসরায়েলের এমন নির্বিচার বোমা বর্ষণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে হামাস। গোষ্ঠিটির প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রও দায়ী। ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ দিয়েছে ওয়াশিংটন।