
পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের এক শান্ত পাড়ায় সোমবার গভীর রাতে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। আত্নীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু ও স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটির বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন এক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তিনি হলেন দিদারুল ইসলাম (৩৬), নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) একজন অফিসার, যিনি গতকাল সকালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই প্রাণ হারালেন
সোমবার সকালে ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন দিদারুল। হঠাৎ এক বন্দুকধারী ভবনের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকধারী ব্যক্তি লাস ভেগাস থেকে গাড়ি চালিয়ে এসেছিলেন এবং নিজেই পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেন।
প্রথম গুলির শিকার হন দিদারুল ইসলাম। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
"তিনি ছিলেন নিউইয়র্কারদের রক্ষক" – মেয়র এরিক অ্যাডামস
হাসপাতালের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস দিদারুলের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন,
“তিনি মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। ইউনিফর্মের বাইরেও তিনি ছিলেন আমাদের শহরের গর্ব।”
একটি বাংলাদেশি পরিবারের স্বপ্নের ভাঙন
দিদারুল ছিলেন দুই সন্তানের বাবা, তাঁর স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা, শিগগিরই তাঁদের তৃতীয় সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখবে। ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার এলাকায় তিনি পরিবার ও বাবা–মায়ের সঙ্গে একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন। সোমবার রাতভর সেই বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া।
প্রতিবেশী এম ডি শাহজাদা বলেন,
“গত বছর হজ করে এসে উনি আমাকে একটি নামাজের জায়নামাজ উপহার দিয়েছিলেন। সেটা ছিল তাঁর কাছে বড় গর্বের বিষয়।”
বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্ক – সংগ্রামের গল্প
মারজানুল করিম নামে দিদারুলের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান,
“উনি বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। প্রথমে একটি স্কুলে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। পরে এনওয়াইপিডিতে যোগ দেন।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার মা একবার ওঁকে বলেছিলেন, ‘পুলিশের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ’। উত্তরে দিদারুল বলেছিলেন, ‘আমি এমন কিছু করতে চাই, যাতে আমার পরিবার গর্ব করতে পারে।’”
কমিউনিটিতে দিদারুলের প্রভাব
স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটিতে দিদারুল ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত। মসজিদে নিয়মিত যেতেন। নতুন প্রবাসীদের চাকরি খুঁজতে সহায়তা করতেন। অনেককে ট্রাফিক এজেন্ট পদে আবেদন করতে উৎসাহ দিতেন, কারণ সেটা তুলনামূলক নিরাপদ চাকরি।
তবে নিজের কাজের ঝুঁকি নিয়ে কখনো বাড়তি কিছু বলতেন না।
শ্যালক সালমান আহমেদ বলেন,
“আমরা ভাবতাম, তিনি নিরাপদ জায়গায় কাজ করেন। কখনো ভাবিনি এমন কিছু ঘটতে পারে। তিনি সব সময় শান্ত থাকতেন, কাজটা ভালোবাসতেন।”
এক বীরের বিদায়
রাত ১টা পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা ছিল দিদারুলের বাড়িতে। অনেকেই রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছিলেন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। ছোট ছোট বাচ্চারা তখনো খেলা করছিল, unaware of the tragedy.
বাড়ির ভেতর থেকে এক শিশুর কান্না শোনা যাচ্ছিল। মুসল্লিরা একত্র হয়ে দোয়া করছিলেন। কেউ কেউ বলছিলেন, “তিনি চলে গেলেন বীরের মতো।”
মারজানুল করিম বলেন,
“পুলিশের পেশায় ঝুঁকি ছিল। কিন্তু দিদারুল একজন বীর হিসেবে শহীদ হয়েছেন। তিনি সব সময় বলতেন, ‘একদিন না একদিন সবাইকে মরতেই হবে।’ হয়তো এটাই ছিল তাঁর নির্দিষ্ট বিদায়।”