ঢাকা,  শুক্রবার
২৫ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

এই মৃত্যু কি আমরা এড়াতে পারতাম না

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ২৩ জুলাই ২০২৫

এই মৃত্যু কি আমরা এড়াতে পারতাম না

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুদের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির প্রধান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অব.) সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। একইসঙ্গে তিনি ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিমান চলাচলের জন্য নির্জন রানওয়ে কেন নয়?

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “এই দুর্ঘটনা কি এড়ানো যেত না?” তাঁর মতে, প্রশিক্ষণ বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য জনবহুল এলাকায় রানওয়ের বদলে নির্জন স্থান যেমন পরিত্যক্ত বিমানবন্দর, চর বা বিস্তীর্ণ মাঠ ব্যবহার করা উচিত। তিনি উদাহরণ দেন লালমনিরহাটের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের, যেটিকে সহজেই সক্রিয় করা যেত।

ঢাকায় যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন—এক মারাত্মক ঝুঁকি

সালাহউদ্দিন বলেন, “ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর, যেখানে উঁচু ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর মানুষে ঠাসা এলাকা। এখানে সামান্য দুর্ঘটনাও ভয়াবহ প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এমন শহরে যুদ্ধবিমান চালানো এক কথায় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।”

তদন্ত ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটি বলা অগ্রহণযোগ্য

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলা হলেও তিনি বলেন, “এটা তো কেবল একটি মতামত। সঠিক কারণ জানতে তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষ অনুসন্ধান দরকার। একটি বিমান কত পুরোনো, কতদিন ধরে ব্যবহৃত—এসবও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

“৫০ বছরে কোনো সরকার অর্থের অভাব বলেনি, তবু বিমান কেনা হয়নি কেন?”

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “স্বাধীনতার পর ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ চালাচ্ছে বিভিন্ন সরকার। কেউ বলেনি অর্থ নেই। তাহলে আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনা হয়নি কেন? আজ এতগুলো শিশু মারা গেল, এর দায় কে নেবে?”

“নিরাপত্তা জনগণের অধিকার, রাজা-বাদশাহ সেজে থাকা চলবে না”

সরকারের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নিরাপত্তার প্রশ্নে অস্থায়ী ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। নিজের পকেট ভর্তি করা বাদ দিয়ে জনগণের জীবনের গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্নীতি প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে—এটা নিয়ন্ত্রণ না করলে উন্নয়ন স্লোগান অর্থহীন।”

“আমরা শিশুদের বাঁচাতে পারিনি—এটা মেনে নিয়ে মা-বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে”

তিনি মনে করেন, নিহত শিশুদের মা–বাবার কাছে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। শুধু একদিন শোক পালন করে দায় সারা যাবে না। আহতদের চিকিৎসা যেন শুধু ‘কথার কথা’ না হয়, সে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

“আমরা দেখেছি, ট্র্যাজেডির পর কমিটি হয়, সুপারিশও হয়—কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না”

সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি আলাদা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “সুপারিশ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব নিচুপর্যায়ের নয়। সিদ্ধান্ত আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।”

তিনি আরও বলেন, “যেকোনো দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। কেউ বলেন বিমান ঠিক ছিল, কেউ বলেন প্রশিক্ষণ যথাযথ ছিল। কিন্তু এই আত্মপক্ষ সমর্থনের চক্রে সত্য চাপা পড়ে যায়।”

“ঘুষ আর অব্যবস্থার বাংলাদেশে দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকবে, যদি না...”

ঢাকায় চলা লক্কড়ঝক্কড় বাসের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আজই যদি সরকার বলে এসব বাস নামানো যাবে না, কাল থেকে আর চলবে না। কিন্তু আমরা দেখি, দুর্নীতি আর স্বার্থরক্ষার কারণে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না।”

অবিলম্বে বিকল্প রানওয়ের দাবি

সালাহউদ্দিন বলেন, “এখনই বিকল্প রানওয়ের পরিকল্পনা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় আসতে পারে। আমরা চাই না আর কোনো শিশুর প্রাণ যাক বিমানবাহিনীর একটুখানি অসতর্কতায়।”

আহতদের যেন অবহেলার শিকার হতে না হয়

তিনি সতর্ক করে দেন, “গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা হয়েছিল—এই শিশুদের অভিভাবকেরা যেন সেই দুর্ভাগ্য না দেখেন। সরকার যে চিকিৎসা দিচ্ছে বলেছে, সেটা যেন কথার কথা না হয়।”


উপসংহার:
উত্তরার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অব.) সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহর এই প্রত্যক্ষ ও সাহসী বিশ্লেষণ আমাদের সামনে এক কঠিন সত্য তুলে ধরেছে—সর্বোচ্চ সতর্কতা আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। সময় ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531