ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩১ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

খামেনিকে হত্যার হুমকি: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের ছায়া

প্রকাশিত: ১৪:০০, ২৮ জুলাই ২০২৫

খামেনিকে হত্যার হুমকি: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের ছায়া

ইসরায়েল ইরান

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। রোববার (২৭ জুলাই) দক্ষিণ ইসরায়েলের রামোন বিমানঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “ইরানের হুমকি যদি চলতে থাকে, তাহলে এবার সরাসরি খামেনিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হবে।”

এই বক্তব্যকে আন্তর্জাতিক মহল নজিরবিহীন ও চরম উত্তেজনাকর বলে মনে করছে। কারণ, এ ধরনের প্রকাশ্য হত্যার হুমকি কূটনৈতিক পরিসরে অত্যন্ত বিরল, বিশেষত কোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাকে লক্ষ্য করে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একপ্রকার “অঘোষিত যুদ্ধের” ঘোষণাও হতে পারে।


কাৎজের হুমকি: কী বলেছিলেন তিনি?

ইসরায়েলি দৈনিক Yedioth Ahronoth–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন,

“আমি এখান থেকে স্বৈরশাসক খামেনিকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই—তুমি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দিতে থাকো, আমাদের লম্বা হাত আবারও তেহরান পর্যন্ত পৌঁছাবে। এবার আরও শক্তিশালীভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাকেও টার্গেট করা হবে।”

তিনি আরও জানান, ১২ দিনের সাম্প্রতিক সংঘাত চলাকালে ইসরায়েল খামেনিকে হত্যা করার চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু কার্যকর সুযোগ তৈরি না হওয়ায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলের চ্যানেল-১৩ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাৎজ বলেন,

“যদি তিনি আমাদের দৃষ্টিসীমায় থাকতেন, আমরা তাকে সরিয়ে দিতাম। ইসরায়েল খামেনিকে খুঁজে পেতে অনেক চেষ্টা করেছে।”


ইরানের প্রতিক্রিয়া কী?

হুমকির পর এখনো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয় বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, “এ ধরনের হুমকি ইরানের জন্য নতুন নয়, তবে এবার তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছানোয় প্রতিক্রিয়া আরও জোরালো হতে পারে।”


ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাত: পটভূমি

চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরায়েল একাধিক ইরানি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়, যার মধ্য দিয়েই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হয়। পাল্টা জবাবে ইরান তেল আবিব লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

এই সংঘাত টানা ১২ দিন চলার পর ২৪ জুন মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু এই যুদ্ধবিরতির পরও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।


আন্তর্জাতিক উদ্বেগ: বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক এখন সরাসরি সংঘাতে রূপ নিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো—

  • ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি

  • তেহরানের হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন

  • ইসরায়েলের একতরফা প্রতিরক্ষা কৌশল

বিশেষজ্ঞদের মতে, খামেনিকে লক্ষ্য করে কোনো হত্যাচেষ্টা বাস্তবায়ন হলে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে বিস্ফোরণমুখী করে তুলবে। এতে শুধু ইরান নয়, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, এমনকি ইয়েমেনেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন-রাশিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তির কোনো নিশ্চয়তা নয়—যদি দুই পক্ষই প্রকাশ্যে একে অপরের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে এমন আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণ করে।

বিশ্লেষকদের মতে, খামেনিকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি শুধু যুদ্ধ উসকে দিচ্ছে না, বরং আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক রীতিনীতিকেও মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করছে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531