আদর্শ দম্পতি হিসেবে পরিচিত তাহসান-মিথিলার সংসার। মাত্র ২০ বছর বয়সে মিথিলা তাহসানকে বিয়ে করেছিলেন। দীর্ঘ ১১ বছর পর তাদের দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে সুখে দাম্পত্য যাপন করছেন মিথিলা। এটি মিথিলার দ্বিতীয় বিয়ে।
২০১৭ সালের অক্টোবরে সুদীর্ঘ ১১ বছরের দাম্পত্য সম্পর্কে ইতি টানেন তাহসান-মিথিলা। ওপার বাংলার শোবিজ দুনিয়ায় এই বিচ্ছেদ ঘিরে কম হইচই হয়নি। তাহসান-মিথিলার সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে কে জানতো? সেই সম্পর্ক নিয়ে আফসোস অভিনেত্রীর।
তাহসানের সঙ্গে ডিভোর্সের প্রায় দু-বছর পর, ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে টলিগঞ্জের নামী পরিচালক, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধেন রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা।
নতুন সম্পর্কে জড়ালেও প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সৌজন্যের সম্পর্ক পূর্ণ মাত্রায় বজায় রেখেছেন মিথিলা। আর সেই সম্পর্কের সূত্রধর নিঃসন্দেহে তাহসান-মিথিলার একমাত্র কন্যা আইরা। ডিভোর্সের পর মায়ের কাছেই থাকে সে, কিন্তু সময়-সুযোগ পেলেই তাহসানের সঙ্গেও সময় কাটাতে দেখা যায় আইরাকে। অনুরাগীদের চোখে তাহসান-মিথিলা ছিলো ‘মেড ফর ইচ আদার’ কাপল। কিন্তু মিথিলার কথায়, তার ‘জীবনের বড় ভুল’ তাহসানকে বিয়ে করা।
মাত্র ২০ বছর বয়সে সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসানকে বিয়ে করেছিলেন মিথিলা। সালটা ২০০৬। বাংলাদেশের এক টক শো ‘ফান উইথ ফেবারিটস’-এ ব়্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে সৃজিত ঘরণীকে। সেই ক্লিপিংস এখন ভাইরাল নেটমাধ্যমে।
মিথিলাকে জীবনের বড় ভুল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি সটান জবাব দেন, ‘আমি জীবনে ছোট ছোট ভুল অনেক করেছি… তবে বড় ভুল অনেক ছোটবেলায় বিয়ে করে ফেলা’। এই মন্তব্যের জেরে ‘সাহসী’ মিথিলাকে তুমুল কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়। একজন নেটিজেন লেখেন- ‘হাস্যকর বড়ই হাস্যকর। ছোটবেলায় তাহসান এর মতো সেলিব্রিটিকে বিয়ে না করলে, আপনার মতো মিথিলা সারাজীবন প্রদীপের নিচেই থেকে যেতেন’। অপর একজন লেখেন, ‘মিথিলা আপুর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল; তাহসান ভাইয়ের অসম্ভব ভালোবাসাকে বুঝতে না পারা’।
এই শো'তেই প্রাক্তন স্বামী তাহসানের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিথিলা জানান, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার মেয়ে। আর তাহসান আমার সন্তানের বাবা। সেইজন্য যতটুকু বন্ধুত্বসুলভ থাকা যায়, আমরা ততটুকু বন্ধুত্বসুলভ থাকি’।
আপতত সৃজিতের সঙ্গে ঘোর সংসারী মিথিলা। যদিও মাস কয়েক আগে তাদের সুখী দাম্পত্যে চিড় ধরার গুঞ্জন মাথাচাড়া দিয়েছিল টলিপাড়ায়, তবে মিথিলা যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে দেন। দিন কয়েক আগেই নতুন ছবির ঘোষণা সেরেছেন মিথিলা। অর্ণব মিদ্য়ার আসন্ন ছবি ‘মেঘলা’য় কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকছেন তিনি।
উল্লেখ্য, তাহসান ও মিথিলা ২০০৬ সালে ৩ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আইরা তেহরীম খান তাহসান-মিথিলা দম্পতির একমাত্র সন্তান। তাহসান মিথিলার পরিচয় গানের মাধ্যমে। তাহসান তখন ব্ল্যাক ব্যান্ডের গায়ক। এক বন্ধুর সঙ্গে তাহসানের আড্ডায় গান শুনতে যান মিথিলা। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়। বিয়ের পর এ জুটি একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম’, ‘মধুরেন সমাপয়েত’ নাটকসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন এই জুটি। নাটক ছাড়াও এ জুটি একসঙ্গে গানও গেয়েছেন।
২০১৭ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের খবর জানান তাহসান-মিথিলা। বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে মিথিলা বলেন, ‘একটি ইস্যু নিয়ে তো আর কখনো বিচ্ছেদ হয় না। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন মেয়ের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা এত সহজ নয়। কিন্তু একটা সময় আমাকে মেনে নিতে হয়েছে এটাই বাস্তবতা। জীবনচলার পথের একটা সময় এসে আমরা বুঝতে পারলাম, দুজন মানুষ যার যার জায়গা থেকে দুই ধরনের জিনিস চাই। তাহসানের জীবনের লক্ষ্য হয়তো একরকম, আমার হয়তো আরেক রকম। তবু দুজন ভিন্ন রকম মানুষ তো একসঙ্গে থাকে। আমরাও থেকেছি। শেষ পর্যন্ত আর হলো না। আমাদের যখন বিয়ে হয়, তখন আমাদের দুজনের বয়সই অনেক কম। আমাদের ক্যারিয়ারও একসঙ্গে গড়ে উঠেছে। এমন না যে, কেউ কারও আগে বা পরে এসেছি। সেসব দিক থেকে আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা ছিল না। কিন্তু একটা সময় এসে মনে হচ্ছিল, ১১ বছর আগের একজন মানুষ আর পরের একজন এক থাকে না। অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। তাই বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়েছে।’
বিচ্ছেদের কারণ প্রসঙ্গে তাহসান শুধু এটাই বললেন, ‘সমাজ কী বলবে—এই ভয়ে অভিনয় করে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, আমরা দুজন এ ব্যাপারে একমত নই।’
এসএস