
অনেকেরই ভ্রমণের সময় অস্থির লাগা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটা মূলত বলা হয় মোশন সিকনেস। জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ মোশন সিকনেস কেন হয় এবং এর প্রতিকার কী সেসম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
মানুষ যখন বাস, ট্রেন, বিমান, জাহাজ, লঞ্চ বা নৌকায় ভ্রমণ করে, তখন বমি বমি ভাব, কিংবা বমি হওয়া, মাথা ঘোরানোসহ অস্বস্তি বোধ করে। আর তাকেই মোশন সিকনেস বলা হয়। অর্থাৎ মোশনের কারণে যে অসুস্থতা সেটিই মোশন সিকনেস।
এটি কেন হয় তার সঠিক কোনো কারণ জানা যায় না। তবে বাবা-মায়ের মোশন সিকনেস থাকলে সন্তানেরও হতে পারে। অধ্যাপক ডা. আবু হানিফ বলেন, কানের কাজ হলো শোনা এবং ভারসাম্য রক্ষা করা। এই ভারসাম্য রক্ষার জন্য কয়েকটি জিনিসের ওপর নির্ভরশীল।
যেমন- চোখ, কান, ঘাড়ের মাংসপেশি ও জয়েন্ট। এই সবগুলো থেকে যখন মস্তিষ্কে বার্তা যায় তখন মস্তিষ্ক কো-অর্ডিনেট করে এবং শরীরের ভারসাম্য সমন্বয় করে। এই কো-অর্ডিনেশনে যখন কোনো বিভ্রান্তি হয় তখন ভারসাম্য ঠিক থাকে না। তখন মস্তিষ্ক চলমান নাকি স্থির সেটি বুঝতে পারে না। তখনই মোশন সিকনেস হয়।
যখন কেউ জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউ দেখে তখন মনে হয় সমুদ্র বা নদীর ঢেউ কাঁপছে। চোখ তখন মস্তিষ্কে মুভিং ইনপুট পাঠায়, কিন্তু শরীর মস্তিষ্ককে বার্তা পাঠায় যে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, বুঝতে পারে না কোন ইনপুট ঠিক। এই বিভ্রান্তিকর অবস্থায় মোশন সিকনেস হয়।
সাধারণত ২ থেকে ১২ বছরের শিশু এবং নারীদের এই মোশন সিকনেস বেশি হয়। নারীদের মধ্যে যারা অন্তঃসত্ত্বা তাদের, অথবা পিরিয়ডের সময়, বা যাদের মাইগ্রেন আছে, যারা হরমোনাল ওষুধ খান তাদের মোশন সিকনেস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
ভ্রমণের সময় হঠাৎ করে অস্বস্তিবোধ হওয়া, অস্থির লাগা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তিবোধ, ঘাম হওয়া, গা গুলানো এগুলোই মোশন সিকনেসের লক্ষণ।
যাত্রা বা ভ্রমণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মোশন সিকনেস ঠিক হয়ে যায়। তবে কারো কারো চার ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত এর প্রভাব থাকতে পারে বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ।