
ইসরায়েলি বাহিনী
গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানে নিজেদের বাহিনীর গুলিতেই (ফ্রেন্ডলি ফায়ার) প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ জন সেনা। ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর বরাত দিয়ে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের মোট ৪৪০ জন সেনা নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭২ জন নিহত হয়েছেন অভিযান-সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায়, যা মোট সেনা মৃত্যুর প্রায় ১৬ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ফ্রেন্ডলি ফায়ার ও বিশৃঙ্খলার চিত্র
ইসরায়েলি সেনাদের মৃত্যুর ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—
-
৩১ জন নিহত হয়েছেন নিজেদের বাহিনীর ভুল গুলিতে (Friendly Fire)
-
২৩ জন গোলাবারুদের দুর্ঘটনায়
-
৭ জন সাঁজোয়া যান চাপায় পিষ্ট হয়ে
-
৬ জন অজ্ঞাত দিক থেকে গুলিবর্ষণের শিকার হয়ে
-
আরও ৫ সেনা নিহত হয়েছেন কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনায়—যেমন উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া বা ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অসাবধানতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার পর ৩২ জন সেনা নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে মাত্র দুজন অভিযানের বাইরে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়
ইসরায়েলি সেনাদের মৃত্যুর এ সংখ্যা আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও, গাজা উপত্যকায় চলমান হামলায় যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা আরও অনেকগুণ ভয়াবহ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৫৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের পক্ষেও বড় রকমের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য উঠে এসেছে—
-
মোট সেনা নিহত: ৮৮২ জন
-
আহত: ৬,০৩২ জন
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ, বেসামরিক হত্যাযজ্ঞ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)-এ তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যার (Genocide) অভিযোগে মামলা চলছে।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষিত
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় এক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা মার্চের শেষ দিকে ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে।
নিজেদের সেনাদের মধ্যেই গোলাগুলির ঘটনা, অব্যবস্থাপনা ও সামরিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধ নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক চাপ ও গণহত্যার অভিযোগের মুখেও গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।