ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৩ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে ৭৫ কোটি টাকা ঘুষ নেন আনিসুল হক

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ৩ জুলাই ২০২৫

ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে ৭৫ কোটি টাকা ঘুষ নেন আনিসুল হক

আনিসুল হক

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, ঘনিষ্ঠ পাঁচ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে তিনি ২০১৯ ও ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে মোট ৪০ দফায় ৭৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) হিসাব বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আনিসুল হক নিজের নামেই নমিনি ছিলেন তার ব্যবসায়িক বন্ধু, মা, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাগিনা এবং কথিত বান্ধবী তৌফিকা করিমের ব্যাংক হিসাবগুলোর। এসব হিসাবের প্রতিটিতে নগদ টাকা জমা হয়েছে, যা অর্থ পাচার ও ঘুষ গ্রহণের একটি সুপরিকল্পিত চিত্র স্পষ্ট করে।

যাদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছিলেন

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে পাঁচজন ঘনিষ্ঠের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার বিষয়টি—

  • মোহাম্মদ ইকবাল (ব্যবসায়িক পার্টনার): সাত দফায় ১২.৪৭ কোটি টাকা, সর্বোচ্চ ৪.৯৯ কোটি এককালীন জমা।

  • জাহানারা হক (মা): ১২ দফায় ২৮.২৩ কোটি টাকা, সর্বোচ্চ ৫.৮৫ কোটি জমা।

  • জেবুন্নেসা বেগম হক (ভাইয়ের স্ত্রী): চার দফায় ৪.৮৫ কোটি টাকা

  • এস কে মো. ইফতেখারুল ইসলাম (ভাগিনা): ১১ দফায় ২৪.৯২ কোটি টাকা, সর্বোচ্চ ১১.৫৫ কোটি এককালীন জমা।

  • তৌফিকা করিম (কথিত বান্ধবী): ছয় দফায় ৪.৭৫ কোটি টাকা

সবগুলোর নমিনিতেই নাম ছিল আনিসুল হকের। এতে করে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যে, এটি ছিল ঘুষ গ্রহণের উদ্দেশ্যেই সাজানো আর্থিক ফাঁদ।

দুদকের মামলার বিবরণ

গত ১ জানুয়ারি, দুদক আনিসুল হকের বিরুদ্ধে ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে—

  • ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তার ২৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩৪৯ কোটি টাকা জমা৩১৬ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে।

  • দুদকের আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

  • বর্তমানে তার ২৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৭টি তার নিজের নামে।

তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধেও মামলা

তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে গত ২৪ মে দুদক ৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ৮৮টি ব্যাংক হিসাবের ৩৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে মামলা করে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং এপ্রিলের দিকে তার ৩৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।

আনিসুল হকের গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক পটভূমি

বিগত তিন সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে নির্বাচিত হন আনিসুল হক। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত বছর ১৩ আগস্ট তিনি সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে ২০ জানুয়ারি তাকে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও বিচারাধীন রয়েছে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531