ঢাকা,  বুধবার
০২ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প, বাশার পরবর্তী শাসক আল–শারার ভবিষ্যৎ এখন বিশ্ব নজরে

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ১ জুলাই ২০২৫

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প, বাশার পরবর্তী শাসক আল–শারার ভবিষ্যৎ এখন বিশ্ব নজরে

ট্রাম্প ও শারা

সিরিয়ার ওপর থেকে দীর্ঘদিনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার জারি করা এই আদেশের ফলে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জারি থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটতে যাচ্ছে—যা দেশটির যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনে বড় বাধা হয়ে ছিল।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারার নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার এখন দেশ পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে কী পরিবর্তন আসছে?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ায় উন্নয়নমূলক কাজ, সরকারি কার্যক্রম এবং সামাজিক পুনর্গঠনের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫১৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তবে সব নিষেধাজ্ঞা একযোগে প্রত্যাহার করা হয়নি। বিশেষ করে সিরিয়ার আগের প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ, আইএসআইএল (আইএসআইএস), ইরান ও এর মিত্রদের ওপর জারি নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন প্রশাসন।

ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি: “সিরিয়াকে হতে হবে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ”

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সিরিয়াকে সমর্থন করে, যেটি হবে স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ। সিরিয়া যেন আর কখনো সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় না হয়, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে।”

এই ঘোষণাকে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতির একটি নতুন ধাপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

আল–শারার নেতৃত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত

সিরিয়ার নতুন শাসক আহমেদ আল–শারা, যিনি বিদ্রোহী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছেন, তাঁকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। আল–শারা এক সময় আল–কায়েদার সিরিয়া শাখা আল–নুসরা ফ্রন্টের নেতা ছিলেন। যদিও তিনি ২০১৬ সালেই আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং পরে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গঠন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আল–শারার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন সংশ্লিষ্টতা’ সংক্রান্ত অবস্থান নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়।

আল–শারার প্রতিশ্রুতি ও সংকট

আহমেদ আল–শারা, যিনি আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামেও পরিচিত, সম্প্রতি সৌদি আরবে ট্রাম্পের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং আশ্বস্ত করেন যে সিরিয়া প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না—এমনকি গোলান মালভূমি নিয়েও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে যাবে না।

তবে দেশজুড়ে বিশেষত আলাউতি সম্প্রদায়ের ওপর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে আসছে, যা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে। বাশার আল–আসাদ নিজেও এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এখন সিরিয়ার পুনর্গঠনে যুক্ত হতে আগ্রহী হবে। একই সঙ্গে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি পথ তৈরি হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ইলহান ওমর ও রিপাবলিকান আনা পলিনা লুনা এই সপ্তাহেই একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যার মাধ্যমে সিরিয়ার ওপর থেকে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আইনি ভিত্তি তৈরি হচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

যদিও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ পূর্ণ স্বীকৃতি দেয়নি, তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে একধরনের কৌশলগত সমর্থন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এ সমর্থন শর্তসাপেক্ষ এবং জটিল।

আহমেদ আল-শারা এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার এখন ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দেশীয় ঐক্য এবং মানবাধিকার রক্ষা—এই তিনটি স্তম্ভের ওপরই নির্ভর করছে সিরিয়ার নতুন যাত্রাপথ। আর যুক্তরাষ্ট্র সেই যাত্রায় নতুন করে সঙ্গী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531