ঢাকা,  রোববার
২০ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

পুলিশের সামনে চাপাতি হাতে ছিনতাই, শহরে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ১০:০৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

পুলিশের সামনে চাপাতি হাতে ছিনতাই, শহরে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন

পুলিশের সামনে চাপাতি হাতে ছিনতাই

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পুলিশের সামনেই এক যুবকের কাছ থেকে চাপাতির ভয় দেখিয়ে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে নির্বিঘ্নে সরে পড়েন এক ছিনতাইকারী। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের এই ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ঘটনার সময় আশপাশে পুলিশ সদস্যসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনো প্রতিরোধ বা হস্তক্ষেপ করেননি।


 ভিডিও ফুটেজে কী দেখা গেছে?

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডির নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে রাসেল স্কয়ারের দিকে এক ব্যক্তি চাপাতি হাতে সাদা শার্ট ও জিন্স পরা এক যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ভয় দেখান। এরপর ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে চলে যান। পুরো ঘটনাটি ঘটে সড়কে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে। দুইজন ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্য এবং এক সাদাপোশাকের পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।


 নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেঙে পড়া চিত্র

ছিনতাইয়ের সময় আশপাশে বেশ কয়েকজন সাধারণ পথচারী থাকলেও কারও মধ্যে কোনো প্রতিরোধ করার প্রবণতা দেখা যায়নি। বরং সবাই চুপচাপ তাকিয়ে ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—“পুলিশের সামনেই যদি ছিনতাই হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ?”


 পুলিশ কী বলছে?

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যাশৈন্যু মারমা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “ঘটনাটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর ঘটে। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখনও ভুক্তভোগী যোগাযোগ করেননি।”

ওসি আরও বলেন, “রাসেল স্কয়ার এলাকায় রাতে ট্রাক এবং নৈশকোচের চাপ থাকে। ট্রাফিক পুলিশ তখন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিল। ঘটনাটি এড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।”

পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, “ছিনতাইকারীর পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশা করছি।”


 পূর্ববর্তী একই ধরনের ঘটনা: শ্যামলী ছিনতাই ভিডিও

এর আগেও এমন ঘটনা ভাইরাল হয়। গত ১১ জুলাই ভোরে শ্যামলী ২ নম্বর সড়কে শিমিয়ন ত্রিপুরা নামের এক যুবক ছিনতাইয়ের শিকার হন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ছাতা হাতে হেঁটে যাওয়ার সময় পেছন থেকে মোটরসাইকেলে আসা তিনজন তাঁর পথ রোধ করে। দুজন ছিনতাইকারী চাপাতি নিয়ে নেমে তাঁর মানিব্যাগ, ফোন, ব্যাগ এমনকি জামা-জুতা খুলে নিয়ে চলে যায়।

ওই ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে তিন ছিনতাইকারীকে ১৮ জুলাই সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


 বিশ্লেষণ: ক্রমবর্ধমান ভয় ও দায়হীনতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুটি ঘটনায় রাজধানীর জননিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুলিশের উপস্থিতিতেও প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইকারী নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারছে—এটা কেবল অপরাধীদের দুঃসাহস নয়, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদা রশীদ বলেন, “এটি একটি বিপজ্জনক সামাজিক সংকেত। জনগণের মনে যদি এই ধারণা জন্মায় যে পুলিশ সহায়তা দেবে না, তখন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বাড়তে পারে।”


নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ঝরে পড়ে। অনেকে লেখেন:

  • “চাপাতি হাতে মানুষ ছিনতাই করছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। আমরা কোথায় বাস করছি?”

  • “ঢাকায় রাস্তায় বের হওয়া মানে যেন নিজ দায়িত্বে মরতে যাওয়া।”

  • “পুলিশ ব্যস্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে, অপরাধ দমন কি কারও দায়িত্ব নয়?”


সরকারি প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিত?

বিশ্লেষকদের মতে, নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো জরুরি:

  1. পুলিশের নজরদারি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা বাড়ানো।

  2. রাতে মোড়ে মোড়ে বিশেষ মোবাইল টহল ও নজরদারি ক্যামেরার ব্যবহার।

  3. ঘটনার ভিডিও আসা মাত্র স্বতঃপ্রণোদিত মামলা ও তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার।

  4. ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা ও প্রতিকার নিশ্চিত করা।

ধানমন্ডি ও শ্যামলীর ঘটনায় যে বার্তা উঠে আসে তা হলো—ঢাকায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় আর নিরাপদ নন। ছিনতাই এখন শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং ভয়, আতঙ্ক এবং আইনের শাসন ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি হুঁশিয়ারি: নিরাপত্তাহীনতা যত বাড়বে, তত বেশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531