ঢাকা,  মঙ্গলবার
০৩ জুন ২০২৫

Advertisement
Advertisement

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন, জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ১৮:১০, ১ জুন ২০২৫

আপডেট: ১৬:২০, ২ জুন ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন, জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শেখ হাসিনা

 আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন। বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাঁচটি চার্জ আমলে নেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন।

ঐতিহাসিক বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার:

এই বিচার কার্যক্রম প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে কোনো মামলার বিচার কার্যক্রমের সরাসরি সম্প্রচারের প্রথম ঘটনা।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল:

এর আগে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগের বিস্তারিত:

গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এই ঘটনায় 'মাস্টারমাইন্ড' এবং 'সুপিরিয়র কমান্ডার' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গুলির সরাসরি নির্দেশনা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন বলে অভিযোগ। এই মামলায় বর্তমান সরকারের দু'জন উপদেষ্টা, পুলিশ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ ৮২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে যা উঠে এসেছে:

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণঅভ্যুত্থানের শেষ মুহূর্তে (গত ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি (আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) সহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারী সাধারণ মানুষকে, যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছিলেন, তাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে সরাসরি হত্যার নির্দেশ এবং গুলি করে পঙ্গু করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনার বহু কল রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে।

সংগৃহীত আলামত:

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধার করা বুলেট, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউলসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে।

মামলার প্রেক্ষাপট:

এর আগে গত জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন গত ১২ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযোগ করা হয়েছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বাদী হয়ে মামলা করে।

পাঁচটি অভিযোগ:

প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রথমটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে 'উস্কানি' ও 'প্ররোচনা' দেওয়া; দ্বিতীয় অভিযোগ সরাসরি গুলির নির্দেশনা এবং বাকি তিনটি অভিযোগ সুনির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়েছে।

সাক্ষ্য প্রমাণ:

প্রসিকিউশন জানিয়েছে, এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে হতাহতদের যেসব ডাক্তার চিকিৎসা দিয়েছেন, যারা সরাসরি আহত হয়েছেন এবং শহীদ পরিবারের স্বজন যারা লাশ বুঝে নিয়ে দাফন করেছেন, তারাও সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আসবেন। পাশাপাশি আলামত হিসেবে বিভিন্ন কল রেকর্ড, অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ, জাতীয় দৈনিকে কাটিং প্রস্তুত এবং উদ্ধার করা বুলেট জব্দ করা হয়েছে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531