
স্টারলিংক
যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার (২০ মে) এ সেবার উদ্বোধন ঘোষণা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং স্টারলিংক নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
কীভাবে সেবা পাওয়া যাবে:
স্টারলিংকের সেবা নিতে হলে গ্রাহককে সরাসরি স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখান থেকে ‘রেসিডেনশিয়াল’ অপশন বেছে নিয়ে নিজের অবস্থান নির্বাচন করে ‘অর্ডার নাউ’-এ ক্লিক করতে হবে। এরপর চেকআউট করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও অর্থ পরিশোধের পর ‘প্লেস অর্ডার’ করলেই হবে।
বর্তমানে ‘রোম’ অর্থাৎ চলমান ইন্টারনেট সেবা অনুমোদন না থাকায় সেটি ব্যবহারযোগ্য নয়। অর্ডার সম্পন্ন হলে তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।
খরচ কত?
স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবায় দুইটি প্যাকেজ চালু করা হয়েছে:
-
রেসিডেন্স: মাসিক খরচ ৬,০০০ টাকা
-
রেসিডেন্স লাইট: মাসিক খরচ ৪,২০০ টাকা
এছাড়া এককালীন সরঞ্জাম কিনতে হবে যার মূল্য ৪৭,০০০ টাকা। এই কিটে থাকবে:
-
অ্যানটেনা (রিসিভার)
-
কিকস্ট্যান্ড
-
রাউটার
-
তার
-
পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট
ইন্টারনেট ভাগাভাগি করে ব্যবহার:
একটি স্টারলিংক ডিভাইস থেকে ২০–৫০ মিটার পর্যন্ত সংযোগ পাওয়া যাবে, যা গ্রামীণ এলাকায় ৫০–৬০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ফলে একাধিক ব্যবহারকারী মিলেও এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সেবা?
সরকার বলছে, দেশের মাত্র ৩০% মোবাইল টাওয়ার এখনো ফাইবার অপটিকসের আওতায়। বাকি ৭০% মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে পরিচালিত, যার সক্ষমতা সীমিত।
স্টারলিংক ব্যবহার করে মাত্র একটি সেটআপ দিয়েই প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শহরের মতো উচ্চগতির সংযোগ পাওয়া যাবে। এটি হবে একধরনের টেকসই বিকল্প এবং দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বাস:
স্টারলিংকের কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু নিরাপত্তা সংশয় থাকলেও, বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, তাদেরকে স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে সেবা দিতে হবে। শুরুতে তারা ৯০ দিনের জন্য বিদেশি গেটওয়ে ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (NTMC) এর সঙ্গে স্টারলিংকের যোগাযোগ হয়েছে এবং তারা আইন অনুযায়ী নজরদারি মেনে চলবে।
বিনিয়োগ ও লাইসেন্স:
স্টারলিংক ২০২১ সাল থেকেই বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে আসছিল। তবে মূল গতিশীলতা আসে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর। ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ বিডা থেকে বিনিয়োগ নিবন্ধন এবং ২৯ এপ্রিল বিটিআরসি থেকে ১০ বছরের লাইসেন্স পায় তারা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রতিযোগিতা:
স্টারলিংকের পাশাপাশি অ্যামাজন কুইপার, ওয়ানওয়েব, টেলিসেট এবং চীনা প্রতিষ্ঠান জিডব্লিউ বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবার আগ্রহ দেখিয়েছে। সরকার বলেছে, তারা সবাইকে সমান নীতি সুবিধা দেবে।