ঢাকা,  বুধবার
৩০ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ালেও গোপনে চায় মধ্যস্থতাকারী

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৮:১০, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ালেও গোপনে চায় মধ্যস্থতাকারী

ভারত-পাকিস্তান

পুলওয়ামা হামলার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ভারত ও পাকিস্তান আবার ফিরে এসেছে সেই পুরোনো অবস্থানে — মুখোমুখি উত্তেজনা, দোষারোপ, কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস এবং যুদ্ধোন্মত্ত প্রচারমাধ্যমের ছক। পাকিস্তানি সাংবাদিক আরিফা নূর সতর্ক করেছেন, দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি যেন একটি ইচ্ছাকৃত সংঘাতের দিকেই এগিয়ে চলেছে — যেখানে উভয় পক্ষই সংঘর্ষ চায় না বললেও, কার্যত তারা তেমন পথেই হাঁটছে।

সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব বেড়েছে, কমেছে ভিসা ইস্যু, এবং দোষারোপের পালা যেন দৈনন্দিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সেনা মোতায়েন ও সীমান্ত উত্তেজনার পাশাপাশি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোতেও শুরু হয়েছে যুদ্ধোন্মুখ প্রচার। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, আবার কি কোনো 'সীমিত সংঘর্ষ', বিমানযুদ্ধ বা বড় পরিসরের সংঘাত ঘটতে চলেছে?

পুলওয়ামার পর ২০১৯ সালে বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলা এবং পাকিস্তানের পাল্টা জবাবে দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল উপমহাদেশ। সেই সময় পাকিস্তান দ্রুত ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেয় উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর তথ্যমতে, সেই সময় একজন ভারতীয় কর্মকর্তা মার্কিন প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়ে ফোন করেছিলেন।

এই অভিজ্ঞতা দুই দেশের জন্য একটি শিক্ষা হওয়ার কথা ছিল যে, ‘সীমিত সংঘর্ষ’ সহজেই বড় যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। কিন্তু আজকের বাস্তবতা যেন ঠিক তার বিপরীত। একদিকে ভারত দাবি করছে পাকিস্তানকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে হবে, অন্যদিকে পাকিস্তানে প্রত্যাশা বাড়ছে যে, প্রতিটি ভারতীয় আক্রমণের জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া হবে — এমনকি বিমান ভূপাতিত করা পর্যন্ত।

আরিফা নূর বলছেন, উপমহাদেশের সংঘাতগুলো বেশিরভাগ সময় 'ভুল বোঝাবুঝি' থেকে নয়, বরং ইচ্ছাকৃত উত্তেজনা তৈরি করে সংঘাতে জড়ানো হয়। এই পরিস্থিতিতে বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোলা থাকে না, কারণ কেউই একে অপরকে বিশ্বাস করে না।

গণমাধ্যমের ভূমিকা এখন আর সংকট মোকাবেলায় সহায়ক নয় — বরং উল্টো উসকানি দিচ্ছে। দুই দেশের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বা রাষ্ট্রের প্রভাবাধীন মিডিয়া এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে শান্তিকামী কণ্ঠ হারিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানে একজন মন্ত্রী সম্প্রতি মিডিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন 'ভারতের প্রচারণাকে হারানোর' জন্য, যা দেখায় — সরকার নিজেরাই উত্তেজনাকর আলোচনার পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

এই কথাবার্তা এমন এক ঘূর্ণিপাকে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে সরকারগুলো নিজেদের তৈরি করা 'কঠিন অবস্থান' থেকে সরে আসতে পারছে না। জনমতের নামে তৈরি হচ্ছে যুদ্ধে জড়ানোর চাপ। ভারতীয় গণমাধ্যমে '১৯৪৭ সালের কৃত্রিম রাষ্ট্র কাঠামো বিলুপ্ত' করার মত বক্তব্য এবং 'সম্প্রসারিত ভারতের' মানচিত্র এসব উত্তেজনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের কিছু বক্তব্য, যা পাকিস্তানে অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে। কারণ পাকিস্তানের কৃষি ও জীবিকা অনেকাংশেই সিন্ধু নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। এই চুক্তি যদি ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে পাকিস্তানের সামনে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।

বিশ্বব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে, আর এখন ‘যুদ্ধ’ একটি বৈধ কৌশলে পরিণত হচ্ছে — যেমন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি নয়াদিল্লি সত্যিই সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে সরে আসে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী করবে? আর ইসলামাবাদের সামনে কী বিকল্প থাকবে?

সবশেষে, আরিফা নূরের বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আজও ভারত ও পাকিস্তান সেই পুরোনো চক্রে ঘুরছে, যেখানে নিজেরাই সংঘাতে পা বাড়ায়, তারপর অপেক্ষা করে কেউ এসে তাদের ফিরিয়ে নেবে ‘খাদের কিনার’ থেকে। আর এই চক্র যতদিন চলবে, উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির স্বপ্ন ততদিন অধরাই থাকবে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531