ঢাকা,  বুধবার
১৬ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

এডিস মশা কতদিন বাঁচে আর কতবার কামড়ায়?

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৬ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১১:২৫, ৮ অক্টোবর ২০২৩

এডিস মশা কতদিন বাঁচে আর কতবার কামড়ায়?

এডিস মশা কতদিন বাঁচে বা এই মশা কতদিন ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে তা নিয়ে জানার আগ্রহ অনেকেরই আছে। এডিস মশা কামড়ানোর কতদিন পর জ্বর আসে? বা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে কতদিন এই জীবাণু সক্রিয় থাকেগত দুই মাস যাবৎ বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মৃত্যুর সংখ্যা পার করেছে হাজারের ঘর। মানুষ জানতে চায় এই প্রকোপ আর কতদিন চলবে? তাই মানুষের জানতে চাওয়ার মতো কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।

এডিস মশা কামড়ানোর কতদিন পর জ্বর আসে?

ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার নাম এডিস এজিপ্টি। তবে এটি ডেঙ্গু মশা নামেই অধিক পরিচিত। এডিস মশা কামড়ানোর কারণেই ডেঙ্গু জ্বর হয়। তবে এই মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না। এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাবেরা গুলনাহার বলেন, এডিস মশা কামড়ানোর পর পাঁচ থেকে সাত দিন পর জ্বর আসে ও লক্ষ্মণ দেখা দেয়। এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। আর এই জ্বর থাকে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: টি-শার্টের ক্ষুদে গল্প

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে কতদিন এই জীবাণু সক্রিয় থাকে?

এ বিষয়ে চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চার রকম সেরোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- ডেন - , ডেন - , ডেন - এবং ডেন - ৪। এর মানে হচ্ছে একজন মানুষ তার সারা জীবনে সর্বোচ্চ চার বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। একবার একটি ধরনে আক্রান্ত হবার পর তা ভালো হয়ে গেলে ওই ব্যক্তির শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, তা সারা জীবনের জন্য কাজ করে। এরপর যদি আবারও আক্রান্তও হন, সেটি হবে ডেঙ্গুর ভিন্ন কোন ধরন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ভালো হলেই কি তিনি সুস্থ?

অধ্যাপক ডা সাবেরা গুলনাহার বলেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। তখন শরীরে সামান্য ব্যথা একটু জ্বর থাকে এবং  সাধারণত সর্দিকাশিও থাকে না। একে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়। আর এই জ্বর পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।

এডিস মশা কতদিন বাঁচে?

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক . কবিরুল বাশার জানান, একটি পূর্ণ বয়স্ক এডিস মশা গড়ে ১৫-৪০ দিন বাঁচে। তবে এমব মশার জীবন আয়ু নির্ধারণ হয় তাপমাত্রার ওপর। যেমন, শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে, আবার গরম কালে এডিস মশার বৃদ্ধি বংশবিস্তার দ্রুত হয় বলে এডিস মশা কম বাঁচে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?

মানুষর মধ্যে ধারণা ছিল ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলা কামড়ায়। কিন্তু সে ধারণা এখন পাল্টে গেছে। সাম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা তার চরিত্র বদলেছে। এখন এই মশা দিনে বা রাতে সব বেলাতেই কামড়ায়।

আরও পড়নু: মধু ভেজাল না খাঁটি? যেভাবে চিনবেন-জেনে নিন

একটি এডিস মশা কতবার কামড়ায়?

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাসার জানান, ল্যাবে করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি এডিস মশা জীবদ্দশায় গড়ে চার থেকে ছয় বার কামড়ায়। তবে শুধুমাত্র স্ত্রী মশাই কামড়ায়। ফলে একমাত্র স্ত্রী এডিস মশাই ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। আর স্ত্রী এডিস মশাও কেবল মাত্র পেটে ডিম থাকা অবস্থাতে কামড়ায়।

এডিস মশা কীভাবে বাহক হয়? কতদিন থাকে?

এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয় এই ধারণা প্রচলিত হলেও তা সঠিক নয়। এছাড়া আরেকটি ভুল ধারণা আছে যে আক্রান্ত মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু জ্বর হবে। এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশার মাধ্যমে তখনই একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়, যখন মশাটি ভাইরাস ইনফেক্টেড অথবা ভাইরেমিক হবে। একটা এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে যখন ভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী হয় তখন এটাকে বলা হয় ভাইরেমিক।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?

না ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এই রোগ শুধুই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে বা একই বিছানায় ঘুমালে অথবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এডিস মশা ব্যতীত স্পর্শ বা অন্য কোনভাবে এই রোগ ছড়ানোর উপায় নেই।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে তার লক্ষণসমূহ

প্রথমত শরীরের জয়েন্টে, পেশিতে, মাথায়, চোখের পেছনে ব্যথা হবে। শরীরে লালচে ্যাশ হবে। পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। এছাড়া বমি বমি ভাব বা বমি হবে। কাশি,ক্ষুধামন্দা, অস্বাভাবিক দুর্বলতা ক্লান্তি আসবে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হবে (মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো রঙের পায়খানা, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত)। রক্তচাপ কমে যাওয়া, পালস রেট বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন: সাইনোসাইটিসে ভুগছেন? রইল কয়েকটি কার্যকরী ঘরোয়া টোটকা

ডেঙ্গু হলে কী খাবার খেতে হয়?

রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে পানি স্বল্পতা হয়। তাই এই সময় তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হয়। সেই সাথে ফলের  জুস, স্যুপ, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, বা অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে দিতে হবে। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531