ঢাকা,  শুক্রবার
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

মনিরুল সিন্ডিকেটের হিসাবে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মনিরুল সিন্ডিকেটের হিসাবে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ!

সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম

বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে বিদেশি অনুদান এনে সেই অর্থ পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

প্রাথমিক তদন্তে মনিরুল ইসলামের নাটকীয় উত্থান এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এই সিন্ডিকেটে মনিরুল ছাড়াও তার স্ত্রী, শ্যালক এবং শ্যালিকার মতো ঘনিষ্ঠজনেরা জড়িত বলে জানা গেছে। তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

যেভাবে লুটপাট হয়েছে অর্থ
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মনিরুল ইসলাম ও তার সিন্ডিকেট দুটি বিদেশি এনজিও- কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ (কেএসআর) এবং শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল-কে নিয়ন্ত্রণ করে। এই দুটি এনজিও গত সাত বছরে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা অনুদান এনেছিল। অভিযোগ উঠেছে, এই অনুদানের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই অর্থ আত্মসাতের মূল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মনিরুল ইসলামের শ্যালক রেজাউল আলম শাহীনের প্রতিষ্ঠান ‘এস এস এন্টারপ্রাইজ’। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই বিদেশি এনজিও থেকে ১৩ কোটি এবং ২৩ কোটি টাকাসহ মোট ২৮৮ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।

পরিবার ও আত্মীয়দের নামে বিপুল সম্পত্তি ও লেনদেন
মনিরুল ইসলাম তার পরিবার ও আত্মীয়দের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে এই অর্থ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। দুদক ও ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে যেসব তথ্য উঠে এসেছে-

  • মনিরুল ইসলাম: তার নামে আটটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে, যেখানে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন মূলত তার শ্যালক রেজাউল আলম শাহীনের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।
  • স্ত্রী সায়লা ফারজানা: তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব। তার ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের অর্থ জমা হয়েছে, যা তিনি ছেলের পড়াশোনার খরচ বলে দাবি করেছেন। এছাড়া, মনিরুল তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামে রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরায় ৫০টিরও বেশি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
  • শ্যালকের স্ত্রী সানজিদা খানম টুম্পা: একজন গৃহিণী হয়েও তার ব্যাংক হিসাবে স্বল্প সময়ে ১১.৭ কোটি টাকা জমা ও উত্তোলনের প্রমাণ মিলেছে। এই অর্থ বিভিন্ন সময়ে তার স্বামী, শ্যালিকা এবং মনিরুলের স্ত্রীর হিসাব থেকে জমা হয়েছে। তার নামে প্রায় ৬.২ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (FDR) রয়েছে।
  • শ্যালক রেজাউল আলম শাহীন: তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১১টি হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠান এস এস এন্টারপ্রাইজ দুর্নীতির মূল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
  • টুম্পার ভাই দেলোয়ার হোসেন: তার ও তার প্রতিষ্ঠান 'উপমা ইন্টারন্যাশনাল'-এর নামে ৩২টি হিসাব পাওয়া গেছে, যেখানে ২৮ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে তা শ্যালকের হিসাবে স্থানান্তর করে অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেছেন। বর্তমানে তাদের ব্যাংক হিসাবসহ অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, যেহেতু অনুসন্ধান চলমান, তাই এই মুহূর্তে অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। অনুসন্ধান শেষ হলে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531