
ফাইভ-জি: দ্রুতগতির ইন্টারনেটের নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশে অবশেষে শুরু হয়েছে ফাইভ-জি বা পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেড তাদের নির্বাচিত কিছু এলাকায় এই দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে। এতদিন ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে যে অভিযোগ ছিল, ফাইভ-জি আসার পর সেই সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ফাইভ-জির প্রধান সুবিধা কী কী?
ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ফোর-জি'র চেয়ে অনেক দ্রুত এবং কার্যকর। এর মূল সুবিধাগুলো নিচে দেয়া হলো-
- অবিশ্বাস্য গতি: ফাইভ-জির প্রধান আকর্ষণ হলো এর গতি (MBPS)। ফোর-জির তুলনায় এটি ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি দ্রুত হতে পারে। শুরুতে ৫০০ থেকে ৬০০ এমবিপিএস গতি পাওয়া গেলেও, ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে তা কিছুটা কমতে পারে। তবে সাধারণত এটি ফোর-জির দ্বিগুণের বেশি গতি দেবে।
- কম ল্যাগ: ফাইভ-জিতে ডেটা আদান-প্রদানের সময় (ল্যাটেন্সি) অনেক কম লাগে। ফলে কোনো কিছু লোড হতে বা ডেটা পাঠাতে প্রায় কোনো দেরি হয় না।
- ব্যাপক ব্যবহার: ফাইভ-জি শুধুমাত্র দ্রুত ইন্টারনেট দেখার জন্যই নয়, এটি বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। যেমন:
- ভিডিও স্ট্রিমিং ও ক্লাউড গেমিং: হাই-ডেফিনিশন ভিডিও দেখা বা ক্লাউড গেমিং করা হবে একদম মসৃণ।
- ইন্টারনেট অব থিংস (IoT): স্মার্ট ডিভাইস, সেন্সর এবং অন্যান্য IoT ডিভাইসের মধ্যে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করা যাবে।
- স্মার্ট সিটি ও অটোমেশন: ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, স্মার্ট ইউটিলিটি এবং অন্যান্য শিল্প খাতে স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রমের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- দূরবর্তী সেবা: টেলিমেডিসিন, দূর থেকে অস্ত্রোপচার এবং অনলাইন ক্লাসের মতো সেবার মান অনেক উন্নত হবে।
- ব্রডব্যান্ডের বিকল্প: যেসব অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেখানে ফাইভ-জি একটি দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে।
কীভাবে ফাইভ-জি ব্যবহার করবেন?
ফাইভ-জি ব্যবহার করা বেশ সহজ, তবে কিছু শর্ত রয়েছে-
- উপযোগী ফোন: আপনার একটি ফাইভ-জি-সাপোর্টেড স্মার্টফোন থাকতে হবে। আধুনিক মডেলের বেশিরভাগ ফোনেই এই সুবিধা থাকে।
- সিম পরিবর্তন নয়: ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য আপনার সিম কার্ড পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই।
- অতিরিক্ত খরচ নেই: ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য আপনাকে বাড়তি কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। আপনি আপনার বর্তমান ফোর-জি ডেটা প্যাকেজ দিয়েই ফাইভ-জি ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনাকে শুধু নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি গ্রামীণফোন বা রবির ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত এলাকায় আছেন। এরপর ফোনের সেটিংস থেকে কানেকশন অপশনে গিয়ে ফাইভ-জি চালু করে নিতে হবে।
বর্তমানে গ্রামীণফোন রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ফাইভ-জি চালু করছে, আর রবি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের সেবা চালু করেছে। ধীরে ধীরে এই সেবা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিস্তৃত হবে।