
সংকটে বাম দলগুলো, নির্বাচনে বৃহত্তর জোট গড়ার চেষ্টা
শোষিত মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নেয়া কমিউনিজম উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে ব্রিটিশ শাসনামলেই। দেশ ভাগের পর পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল বাম দলগুলো। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই শক্তির বড় অংশ মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়।
তবে স্বাধীনতার পর আদর্শগত বিভাজন ও নেতৃত্বের সংকটে দুর্বল হয়ে পড়ে সংগঠনগুলো। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত মধ্যবিত্তের চিন্তা-চেতনায় বাম আদর্শ আলোড়ন তুললেও বর্তমানে তা ম্রীয়মান। গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও বাসদসহ বেশ কিছু বাম দল ক্ষমতাসীনদের সহযোগী হয়ে জনসমালোচনার মুখে পড়ে।
বর্তমানে দেশে অন্তত ৩০টির মতো বাম রাজনৈতিক দল থাকলেও ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয় ছিল গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অল্প কয়েকটি দল। ফলে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় বামপন্থীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তবু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাম দলগুলো এক ছাতার নিচে এসে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমাদের সব বাম দলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত যোগাযোগও হচ্ছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন জানান, গণতন্ত্র মঞ্চ নিজস্বভাবে প্রার্থী তালিকা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি কেমন দাঁড়ায় তার উপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, এরশাদ আমলে বিএনপি বিহীন ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বাম দলগুলো সর্বোচ্চ ২২টি আসনে জয় পায়। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে তারা ১১টি আসন দখল করে। অন্য কোনো নির্বাচনে ৯টির বেশি আসন পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে একটিও আসন না পাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি দলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আমরা যদি আমাদের রাজনৈতিক ধারার উপর দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারি তবে এই নির্বাচনের পরের নির্বাচনগুলোতে দেশ আমাদের কথাই বলবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ মনে করেন, “সাংগঠনিকভাবে বামপন্থী অনেকটা দুর্বল হয়েছে—এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ভুল-ক্রটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের পথে অগ্রসর হতে হবে।”
তাদের মতে, নির্বাচনই শেষ কথা নয়। সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়েই টিকে থাকতে চায় বামপন্থী শক্তি। তাদের বিশ্বাস, ২০৩০ সালের পরবর্তী সময়ে এই রাজনৈতিক ধারা নতুন করে দৃশ্যমান হতে পারে।