ঢাকা,  শুক্রবার
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

সৌদি আরবে ক্ষমতার উত্থান-পতন: বাদশাহ সালমান থেকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সৌদি আরবে ক্ষমতার উত্থান-পতন: বাদশাহ সালমান থেকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

প্রিন্স মোহাম্মদ

বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের সিংহাসনে বসেন সালমান বিন আবদুল আজিজ। প্রথমে তিনি পুত্র মুকরিন বিন আবদুল আজিজকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা করলেও তিন মাসের মধ্যে তাকে সরিয়ে দেন। তার জায়গায় আসেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। পাশাপাশি মাত্র ২৯ বছর বয়সে মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) হন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

এমবিএসের উত্থান

তখন পর্যন্ত রাজনীতিতে অচেনা নাম ছিলেন এমবিএস। কিন্তু অল্প সময়েই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে বাদশাহর নিকটতম সহযোগী ও ‘দ্বাররক্ষক’ হয়ে ওঠেন। শোনা যায়, তিনি বাবাকে পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে রাখেন, এমনকি নিজের মা ও বোনদেরও গৃহবন্দি করেছিলেন।

ইয়েমেন আক্রমণ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা

২০১৫ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরপরই ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি বাহিনীর আক্রমণের নির্দেশ দেন তিনি। শুরুতে দেশবাসী এ পদক্ষেপকে ইরানবিরোধী সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলেও দ্রুতই এটি সৌদি আরবের জন্য বড় সমস্যায় পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক মহলে এটি এমবিএসের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে সমালোচিত হয়।

নায়েফের পতন

২০১৭ সালে নাটকীয়ভাবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে গৃহবন্দি করে এমবিএসকে যুবরাজ ঘোষণা করা হয়। নায়েফকে ওষুধ থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং চাপের মুখে তিনি পদত্যাগে রাজি হন। এর পরপরই তিনি কার্যত রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

ক্ষমতার দৃঢ়ীকরণ

যুবরাজ হিসেবে এমবিএস রাজনীতিতে পুরনো পরামর্শ-প্রথা (শুরা) ভেঙে একক ক্ষমতা নিজের হাতে নেন। সমালোচকদের প্রতি কঠোর অবস্থান নেন। ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগে রাজপরিবারের সদস্যসহ ৩৮০ জন প্রিন্স, ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা গ্রেফতার হন এবং রিৎজ-কার্লটন হোটেলে আটক থাকেন।

সংস্কার ও আধুনিকায়ন

যুব সমাজ ও নারীদের মন জয় করতে তিনি কয়েকটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেন।

  • ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন।

  • পোশাকে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করেন।
    তবে সমালোচকরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ ছিল অর্থনৈতিক প্রয়োজনে, প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য নয়।

বিলাসিতা ও বিতর্ক

এমবিএসের বিলাসিতার নজিরও ব্যাপক আলোচিত—

  • ৫০ কোটি ডলারে বিশাল ইয়ট ক্রয়

  • ৪৫ কোটি ডলারে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি চিত্রকর্ম সংগ্রহ
    এসব নিয়ে সমালোচনা হলেও তিনি প্রকাশ্যে তা অস্বীকার করেননি।

আন্তর্জাতিক সংকট

তার আমলে আরও দুটি বড় ঘটনা সৌদি আরবকে আলোচনার কেন্দ্রে আনে—

  • লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে জোর করে পদত্যাগ করানোর অভিযোগ

  • সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড

খাসোগি হত্যার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন এমবিএস। সিআইএ পর্যন্ত জানায়, এ হত্যার নির্দেশ তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। যদিও তিনি সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, “এটি একটি জঘন্য অপরাধ, তবে নেতা হিসেবে আমি এর দায় নিচ্ছি।”

মানবাধিকার প্রশ্নে সমালোচনা

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে দেখা যায়—

  • ২০১৮ সালেই সৌদি সরকার ২,৩০৫ জনকে আটক করে, যাদের মধ্যে অনেককে কখনো বিচারকের সামনে হাজির করা হয়নি।

  • অন্তত ২৬ জন সাংবাদিক তখন বন্দি ছিলেন।

  • বহু নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

মোহাম্মদ বিন সালমান আজ সৌদি আরবের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। একদিকে তিনি সংস্কারক হিসেবে তরুণ ও নারীদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিলাসিতা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে আছেন।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531