ঢাকা,  রোববার
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বিশ্বসেরা গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের ঘোষণা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বিশ্বসেরা গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের ঘোষণা

গাজায় গণহত্যা

গাজার ওপর ইসরায়েলের যুদ্ধকে গণহত্যা বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ গণহত্যা বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক গণহত্যা গবেষক সমিতি (International Association of Genocide Scholars – IAGS) সোমবার এক প্রস্তাব পাস করে জানায়, গাজার ভেতরে ইসরায়েলের নীতি ও কর্মকাণ্ড গণহত্যার আইনি সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।

এটি এমন সময়ে এলো, যখন ইতোমধ্যেই বহু দেশ, মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস–নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল আক্রমণে ১,১৩৯ জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন বন্দি হওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৫০০–এর বেশি মানুষ হত্যা করেছে এবং ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে


কারা এই ঘোষণা দিয়েছে?

IAGS হলো ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ৫০০ সদস্যের আন্তর্জাতিক সংগঠন, যেটি গণহত্যা–বিষয়ক শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের বৈশ্বিক মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।

সদস্যদের ৮৬ শতাংশ ভোটে গৃহীত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি বিষয়ক কনভেনশনের আওতায় গণহত্যার সংজ্ঞা পূরণ করে।

IAGS–এর সভাপতি ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেলানি ও’ব্রায়েন বলেন:
“গাজায় যা ঘটছে, সেটি নিঃসন্দেহে গণহত্যা। এটি এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের একটি সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত ঘোষণা।”


আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার সংজ্ঞা কী?

১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ কনভেনশন অনুসারে, গণহত্যা বলতে বোঝায় কোনো জাতিগত, বর্ণগত, ধর্মীয় বা জাতীয় গোষ্ঠীকে আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সংঘটিত কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে রয়েছে—

  • গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা,

  • শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা,

  • জীবনযাত্রার এমন অবস্থা সৃষ্টি করা যাতে তাদের টিকে থাকা অসম্ভব হয়,

  • জন্মনিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া,

  • শিশুদের জোরপূর্বক অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।


IAGS কী ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

IAGS তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনকে ব্যবহার করেছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির আওতায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও বটে।

ইসরায়েলের অপরাধগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে—

  • নির্বিচারে বেসামরিক মানুষ ও অবকাঠামো (হাসপাতাল, ঘরবাড়ি, বাজার) ধ্বংস,

  • নির্যাতন ও ইচ্ছাকৃত আটক,

  • যৌন সহিংসতা,

  • চিকিৎসক, সাংবাদিক ও সাহায্যকর্মীদের ওপর আক্রমণ,

  • খাদ্য, পানি ও ওষুধ বঞ্চনা,

  • ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা,

  • ৯০% ঘরবাড়ি ধ্বংস,

  • বহু প্রজন্মের পরিবার নিশ্চিহ্ন করা,

  • ৫০ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা বা বিকলাঙ্গ করা।

এছাড়া ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের “ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদ পরিকল্পনা”কেও গণহত্যার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।


এ সিদ্ধান্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

এটি কোনো আদালতের রায় নয়, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিশ্বের শীর্ষ গণহত্যা গবেষকরা প্রথমবারের মতো একযোগে ঘোষণা করলেন যে গাজায় যা হচ্ছে, তা গণহত্যা।

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার দাখিল করা মামলাটি বিচার করছে। মামলায় দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েল গণহত্যা করছে। তবে চূড়ান্ত রায় আসতে পারে ২০২৭ সালের আগে নয়


ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি সরকার IAGS–এর সিদ্ধান্তকে “লজ্জাজনক” আখ্যা দিয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে:
“প্রথমবারের মতো গণহত্যা বিশেষজ্ঞরা গণহত্যার শিকারদের (ইহুদিদের) বদলে তাদেরকেই অভিযুক্ত করছে—যদিও হামাস আমাদের জাতির বিরুদ্ধে গণহত্যার চেষ্টা করেছে।”


জাতিসংঘের অবস্থান

জাতিসংঘ নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে “গণহত্যা” শব্দটি ব্যবহার করেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে শত শত জাতিসংঘকর্মী মানবাধিকার প্রধান ফলকার টার্ককে লিখিত অনুরোধ করেছেন এটি স্পষ্টভাবে গণহত্যা ঘোষণা করার জন্য। তবে তিনি এখনো সে পদক্ষেপ নেননি।

তবে জাতিসংঘের একটি বিশেষ কমিটি ২০২৪ সালের নভেম্বরেই জানিয়েছিল, “গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধপদ্ধতি গণহত্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”


গাজার বর্তমান পরিস্থিতি

গাজায় এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ।

  • অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

  • প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

  • ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত।

  • জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ইতোমধ্যেই “বৃহৎ দুর্ভিক্ষ” শুরু হয়ে গেছে।

এছাড়া সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চলছে, যাতে গাজার বাস্তব পরিস্থিতি বাইরের বিশ্বে পৌঁছাতে না পারে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531