ঢাকা,  শুক্রবার
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

আপনার ফোন কি হ্যাক হয়েছে? বুঝবেন যেভাবে এবং বাঁচতে যা করবেন

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৩:৪২, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপনার ফোন কি হ্যাক হয়েছে? বুঝবেন যেভাবে এবং বাঁচতে যা করবেন

আপনার ফোন কি হ্যাক হয়েছে?

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং পাসওয়ার্ড- সবই হ্যাকারের হাতে চলে যেতে পারে যদি আপনার ফোনটি হ্যাক হয়। আপনি ভাবতেই পারেন, ‘আমি তো কোনো ভিআইপি নই, আমার ফোন কেন হ্যাক হবে?’ কিন্তু সাইবার অপরাধীরা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে না, বরং সুযোগ পেলেই আপনার সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নেয়। 

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর ইন্টারনেট ক্রাইম কমপ্লেইন সেন্টার (আইসিথ্রি) প্রতিদিন প্রায় ১,৩০০টি হ্যাকিংয়ের অভিযোগ পেয়েছিল, যা থেকে বোঝা যায় এই সমস্যা কতটা ব্যাপক।

মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ব্লকসেফ টেকনোলজিস এবং স্ট্রাইকফোর্স টেকনোলজিসের সিইও জর্জ ওয়ালার বলেন, ‘যদি আপনার ফোন হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে ই-মেইল ঠিকানা, ফোন নম্বর, ছবি, ভিডিও, ব্যক্তিগত নথি, এমনকি টেক্সট মেসেজও হ্যাকারের নাগালের মধ্যে চলে আসে।’ ওয়ালার আরও সতর্ক করেন, হ্যাকাররা আপনার ফোনের কিবোর্ডে চাপ দেওয়া প্রতিটি অক্ষরও পর্যবেক্ষণ করতে পারে, যার ফলে তারা আপনার সব পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যাংকের তথ্য চুরি করতে পারে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে কিনা, তা বোঝার জন্য কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো।

ফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণসমূহ

  • দ্রুত ব্যাটারি শেষ হওয়া: আপনার ফোনের ব্যাটারির চার্জ যদি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তবে এর একটি কারণ হতে পারে ফোনে ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি। এই ক্ষতিকর সফটওয়্যারগুলো সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে সক্রিয় থাকে এবং প্রচুর চার্জ ব্যবহার করে।
  • ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া: ফোন ব্যবহার না করার পরও যদি এটি অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যায়, তবে এটিও হ্যাকিংয়ের একটি লক্ষণ। ম্যালওয়্যার প্রচুর ডেটা ব্যবহার করে বলে ফোন সার্বক্ষণিক গরম হতে থাকে।
  • ফোন ধীর গতিতে কাজ করা: সাধারণ কাজ যেমন কল করা, মেসেজ পাঠানো বা অ্যাপ চালু করতে যদি ফোন বেশি সময় নেয়, তাহলে এটি হ্যাক হওয়ার লক্ষণ। অনেক সময় কোনো ওয়েবপেজ হঠাৎ করে ক্রাশ করতে পারে। ফোন রিস্টার্ট করার চেষ্টা করলে যদি তা সহজে রিস্টার্ট না হয় বা একদমই না হয়, তবে ম্যালওয়্যার থাকতে পারে।
  • অতিরিক্ত ডেটা ব্যবহার: ফোনের ডেটা ব্যবহার হঠাৎ করে বেড়ে গেলে সতর্ক হোন। ম্যালওয়্যারগুলো প্রচুর পরিমাণে ডেটা ব্যবহার করে, যা আপনার ডেটা প্যাকেজ দ্রুত শেষ করে দেয়।
  • অজানা কল বা মেসেজ: আপনার অজান্তেই যদি ফোন থেকে কোনো অচেনা নম্বরে কল বা মেসেজ চলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে হ্যাকাররা আপনার ফোন নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া, স্ক্রিনে একের পর এক পপ-আপ মেসেজ আসতে থাকলে বুঝতে হবে ফোনে অ্যাডওয়্যার রয়েছে।
  • নতুন অ্যাপের উপস্থিতি: আপনার ফোনে এমন কোনো অ্যাপ দেখতে পেলে যা আপনি নিজে ডাউনলোড করেননি, তা এখনই আনইনস্টল করুন। অনেক সময় হ্যাকাররা ম্যালওয়্যারকে নিরীহ অ্যাপের ছদ্মবেশে ছড়িয়ে দেয়।
  • অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক কার্যকলাপ: আপনার ই-মেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে নতুন ডিভাইস থেকে লগইন বা পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের নোটিফিকেশন পেলে তা দ্রুত পরীক্ষা করুন।
  • অস্বাভাবিক সিগন্যাল সমস্যা: যদি হঠাৎ করে আপনার ফোনের সিগন্যাল চলে যায় এবং অনেক চেষ্টা করেও ফিরে না আসে, তবে এটি 'নম্বর পোর্টিং অ্যাটাক' হতে পারে। এর ফলে আপনার ই-মেইল এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলো লক হয়ে যেতে পারে।

ফোন হ্যাক থেকে বাঁচতে যা করবেন

  • অজানা লিংকে ক্লিক করবেন না: 'অমুকের গোপন ভিডিও ফাঁস' বা এ ধরনের লোভনীয় শিরোনাম দেখে কোনো লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। এসব লিংকে ক্লিক করলে আপনার ফোনে ট্রোজান ভাইরাস (এক প্রকার ম্যালওয়্যার) ঢুকে যেতে পারে।
  • পাবলিক চার্জিং স্টেশন এড়িয়ে চলুন: হ্যাকাররা পাবলিক চার্জিং স্টেশন ও ইউএসবি কেবলে মিনি কম্পিউটার ও ম্যালওয়্যার লুকিয়ে রাখে। তাই বাস, রেলস্টেশন বা শপিং মলের মতো পাবলিক জায়গায় ফোন চার্জ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
  • সন্দেহজনক অ্যাপ ডাউনলোড থেকে বিরত থাকুন: শুধুমাত্র অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর (যেমন গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। সন্দেহজনক গেম বা অ্যাপ থেকে দূরে থাকুন।
  • একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না: সব ওয়েবসাইট ও অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একটি হ্যাক হলে অন্যগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
  • পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন: রেস্তোরাঁ বা হোটেলের মতো জায়গায় ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। যদি একান্তই ব্যবহার করতে হয়, তাহলে ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করুন।

হ্যাক হয়ে গেলে করণীয়

যদি আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে বলে সন্দেহ হয়, তবে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিন-

  • পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: আপনার সব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করুন।
  • মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (MFA) চালু করুন: ফেসবুক, গুগল এবং ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব অ্যাকাউন্টে MFA চালু করুন। এতে হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড জানলেও আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না।
  • ফোন রিস্টোর করুন: আপনার ফোন থেকে সব ডেটা মুছে ফেলুন এবং ফ্যাক্টরি সেটিংসে ফিরিয়ে আনুন। পরে ক্লাউড স্টোরেজ থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নজর রাখুন: আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ওয়ালেট এবং ক্রেডিট কার্ডে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখতে পেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্ট লক করে দিন।

এই সাবধানতাগুলো মেনে চললে আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন, সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531