
সোনা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় (১৯৭১ সালে) এক ভরি সোনার দাম ছিল মাত্র ১৭০ টাকা। ৫৪ বছর পর সেই দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ সোনা সব যুগেই ছিল মূল্যবান, তবে বর্তমান দামে এর অবস্থান আরও অবাক করার মতো।
বিশ্ববাজার ও সোনার সম্পর্ক
বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে সোনার দামের।
-
অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা মানেই সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি।
-
উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় ঐতিহাসিকভাবে সোনার দাম বেড়েছে।
-
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে (আগস্ট ২০২০) বিশ্ববাজারে সোনার দাম একসময় আউন্সপ্রতি ২,০৭০ ডলার ছাড়ায়।
-
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে পাল্টা শুল্ক আরোপের পর এক আউন্স সোনার দাম ৩,৪০০ ডলার ছাড়ায়।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩,৬০০ ডলার অতিক্রম করেছে। স্পট মার্কেটে সর্বশেষ দাম ছিল ৩,৬৫৪ ডলার।
অস্ট্রেলিয়ান ঋণদাতা এএনজেড গ্রুপ পূর্বাভাস দিয়েছে—
-
বছরের শেষে দাম হতে পারে আউন্সপ্রতি ৩,৮০০ ডলার।
-
আগামী জুন নাগাদ দাম আউন্সপ্রতি ৪,০০০ ডলার ছাড়াতে পারে।
পুরোনো সোনা বিক্রির হিসাব
অনেকে ভাবছেন, এখন অলংকার কেনা-বেচার সঠিক সময় কি না।
-
পুরোনো অলংকার বিক্রির নিয়ম: জুয়েলার্স সাধারণত অলংকারের ওজন থেকে ১৭% বাদ দিয়ে দাম নির্ধারণ করে।
-
উদাহরণ:
-
১০ বছর আগে ২২ ক্যারেটের এক ভরি অলংকার কিনেছিলেন ৪৩,০০০ টাকায়।
-
এখন বিক্রি করলে পাবেন প্রায় ১,৫৪,৩৩৬ টাকা।
-
এতে আপনার মুনাফা দাঁড়াবে ১,১১,৩৩৬ টাকা।
-
-
অন্য কোনো দোকানে বিক্রি করলে বাদ যাবে ২২–২৪% পর্যন্ত।
পরামর্শ: যেখান থেকে অলংকার কিনেছেন, সেখানেই বিক্রি করা ভালো। অবশ্যই রসিদ সঙ্গে রাখতে হবে।
নতুন অলংকার কেনার ঝুঁকি
বাংলাদেশে সরাসরি সোনায় বিনিয়োগের সুযোগ কম। তাই সাধারণত অলংকার কিনেই বিনিয়োগ করতে হয়। তবে—
-
অলংকার কিনলে মূল দামের সঙ্গে ৫% ভ্যাট ও মজুরি যোগ হয়।
-
ফলে এক ভরি অলংকার কিনতে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা।
-
বর্তমান অস্থির বাজারে নতুন অলংকার কিনে বিনিয়োগ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ।
ব্যবসায়ীদের মতামত
জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন—
-
সোনার দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে গেছে।
-
খুব প্রয়োজন না হলে মানুষ এখন অলংকার কিনছেন না।
-
ব্যবসা শোচনীয় অবস্থায়।
-
বর্তমানে পুরোনো অলংকার বিক্রি করলে ভালো মুনাফা মিলবে।
-
নতুন কিনতে চাইলে অবশ্যই ব্র্যান্ডেড দোকান থেকে কিনতে হবে, মানের নিশ্চয়তার জন্য।
সোনার বিশুদ্ধতা ও ক্যারেট
২০০৭ সাল থেকে হলমার্ক বাধ্যতামূলক হওয়ার পর সোনার বিশুদ্ধতা যাচাই সহজ হয়েছে।
-
২২ ক্যারেট: ১৪ আনা ২ রতি বিশুদ্ধ সোনা
-
২১ ক্যারেট: ১৪ আনা বিশুদ্ধ সোনা
-
১৮ ক্যারেট: ১২ আনা বিশুদ্ধ সোনা
-
সনাতন পদ্ধতির সোনা: সর্বোচ্চ ১০ আনা
মনে রাখবেন: ১৬ আনায় = ১ ভরি, ৬ রতিতে = ১ আনা।