ঢাকা,  সোমবার
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক, জমির বিরোধে খুন ব্যক্তিও শহীদ

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক, জমির বিরোধে খুন ব্যক্তিও শহীদ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই তালিকায় অনেক প্রশ্নবিদ্ধ নাম যুক্ত হয়েছে। নিহতদের স্বজন, পুলিশি নথি ও মামলা–মোকদ্দমার বিশ্লেষণ থেকে উঠে এসেছে বাস্তবতা—শহীদদের তালিকায় এমন বহু নাম রয়েছে, যাঁরা প্রকৃতপক্ষে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বা ভিন্ন কারণে মারা গেছেন।

জমিজমা বিরোধ ও খুনের ঘটনা

২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট রাজধানীর ওয়ারীতে বিএনপি নেতা মো. আল-আমিন ভূঁইয়া ও তাঁর ছোট ভাই নুরুল আমিন জমিসংক্রান্ত বিরোধে খুন হন। পরিবারের সদস্যেরা স্বীকার করেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবু আল-আমিনের নাম শহীদদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

অসুস্থতা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু

তালিকায় থাকা অনেকের মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিক অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায়।

  • জামাল উদ্দিন নামের এক অটোরিকশাচালক রিকশা চালানোর সময় অসুস্থ হয়ে মারা যান। তবু তাঁকে শহীদ ঘোষণা করা হয়।

  • খুলনার রকিবুল হাসান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান, তারপরও তাঁর নামও তালিকায় ওঠে।

  • মহিউদ্দিন মোল্লা নামে আরেকজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান, অথচ তালিকায় শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।

৫ আগস্টের পর নিহতরাও তালিকায়

আইন অনুযায়ী ৫ আগস্টের পরের ঘটনায় নিহতদের শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তবু দেখা গেছে, ওই তারিখের পর খুন বা দুর্ঘটনায় নিহত কয়েকজনের নামও প্রজ্ঞাপনে আছে।

অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার বাড়ি ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বহু মানুষ নিহত হন। এঁদের মধ্যে অনেকে আগুন নেভাতে গিয়ে মারা গেলেও শহীদের তালিকায় তাঁদের নাম যুক্ত হয়েছে। যেমন নাটোর, লালমনিরহাট, বরগুনা ও যশোরে আগুনে পুড়ে নিহত কয়েক ডজন মানুষের নাম প্রজ্ঞাপনে এসেছে।

পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীর নামও তালিকায়

প্রজ্ঞাপনে চারজন পুলিশ সদস্যের নাম এসেছিল, যদিও একজনের নাম পরে বাদ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনজন পুলিশ সদস্য শহীদ হিসেবে তালিকাভুক্ত। একইভাবে মাদারীপুরের রাজৈরের সাওন মুফতী নামের এক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুও শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও জালিয়াতির অভিযোগ

সরকার প্রতিটি শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা সহায়তা, মাসিক ভাতা ও ঢাকায় ফ্ল্যাটের প্রকল্প ঘোষণা করেছে। অনেকেই স্বীকার করেছেন, আর্থিক সুবিধার আশায় বা প্ররোচনায় তাঁদের স্বজনের নাম শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আবার তালিকায় নাম তুলতে না পারা পরিবারগুলো ক্ষুব্ধ।

আইনি প্রশ্ন

আইনজীবীরা বলছেন, শহীদদের আইনি সংজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। জালিয়াতি করে শহীদ পরিচয় দিলে শাস্তির বিধান আছে। তবু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো জাল মামলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়া

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়ে তালিকা পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু হয়েছে। যাচাই শেষে যাঁরা প্রকৃত শহীদের সংজ্ঞার বাইরে, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আটজনের নাম বাদ পড়েছে।

শহীদ পরিবারের ক্ষোভ

শহীদদের স্বজনেরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ তালিকার কারণে প্রকৃত শহীদদের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শহীদ শাহারিয়ার খাঁন আনাসের মা সানজিদা খান বলেন, “আমরা চাই, প্রকৃত শহীদরাই যেন শহীদের তালিকায় স্থান পান।”

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531