
পুরুষরাও এখন স্ত্রীর পদবি নিতে পারবেন
জোহানেসবার্গ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ — দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানিক আদালত বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত vigente আইন—যা পুরুষদের স্ত্রীর পদবি গ্রহণে বাধা দিত—লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য; তাই তা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত মূলত Jordaan and Others v Minister of Home Affairs and Another নামে মামলাটিতে এই রায় দিয়েছে।
সংক্ষেপে কী সিদ্ধান্ত বলা হয়েছে
-
আদালত উল্লেখ করেছে যে আইনটি কেবল সরাসরি বৈষম্যমূলক ছিল না; বরং এটি পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক নিয়ম–নীতি ও ঔপনিবেশিক আমলি আমদানি হিসেবে লিঙ্গভিত্তিক প্রণোদনা/ধারণাকে জোরদার করেছিল—তাই তা কৌশলগতভাবে ‘গভীর ও সূক্ষ্ম’ আঘাত করে ব্যক্তিগত পরিচয়ের স্বাধীনতায়।
-
নির্দেশ: সংসদকে (Parliament) এবং রাষ্ট্রকে আইন সংশোধন করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে; পাশাপাশি রায় বাস্তবায়নের রংখনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও আছে। সঙ্গে—সংক্ষিপ্তভাবে—আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত রায়ের আরেকটি প্রয়োগযোগ্য ব্যবস্থা আদালত উল্লেখ করেছে।
কী ধরনের আইন বদলানো হচ্ছে (পটভূমি)
বর্তমান Births and Deaths Registration Act, 1992 এর বিধান অনুযায়ী জুটির অবিবাহিত/বিবাহিত অবস্থার পরিবর্তনের সময় শুধুমাত্র নারীরা রাষ্ট্রের নথিতে পরিবারিক পদবি বদলাতে পারতেন; পুরুষদের ক্ষেত্রে একই অধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছিল না। এই বিধানগুলোই চ্যালেঞ্জ করে দুই দম্পতি ২০২৪ সালে হোম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন।
মামলাকারীদের কাহিনি (উদাহরণ)
আদালতে দুই জুটির আবেদন নিয়ে শুনানিতে তাঁদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় — উদাহরণস্বরূপ, এক দম্পতির পুরুষ অংশীদার চেয়েছিলেন স্ত্রীর পরিবারের পদবি গ্রহণ করে স্ত্রীর মৃত মা–বাবাকে সম্মান দেখাতে; আর অন্য মামলায় একজন নারী অনুরোধ করেছিলেন নিজ পরিবারের পদবি নিজের নামের সঙ্গে রেখে দেওয়ার জন্য কারণ তিনি পরিবারের একমাত্র সন্তান। মামলাকারীদের নাম ও কেসের বিবরণ মর্মে রেকর্ডে বিচিত্র বর্ণনা রয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক পরিণতি
রায়ের পরে সমাজের প্রতিক্রিয়া মিশ্র—কিছুভাগেই এটিকে নারী-পুরুষ সমতারদিকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে; আবার কিছুভাগে ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি আঘাত হিসেবে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কিছু ঐতিহ্যবাহী নেতারা ও সম্প্রদায়ের অংশ এক্ষেত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রায়কে তাদের কৃষ্টি-প্রথার বিপরীতে বলছেন। একই সঙ্গে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা—উভয় দফতর (হোম অ্যাফেয়ার্স; ন্যায়বিচার ও সংবিধানিক উন্নয়ন)—রায়ে সরাসরি আপত্তি না করে বলেছেন যে আইনটি পুরনো এবং সংশোধনের সময় এসেছে।
প্রয়োগ: বাস্তব জীবনে কী পরিবর্তন আসবে?
-
আইনি সমতা: পুরুষদেরও এখন স্ত্রীর পদবি গ্রহণ বা যুগ্ম-হাইফনযুক্ত পদবি (hyphenated surname) ব্যবহার করার আইনি পথ খুলে যাবে—যদি সংসদ সংশোধনী আনার পর প্রশাসনিক প্রক্রিয়াও আপডেট করা হয়।
-
প্রশাসনিক পরিবর্তন: দপ্তরগুলো (Home Affairs) নিবন্ধন ফর্ম, আবেদন প্রক্রিয়া ও যাচাই-বাছাইকারক নিয়মাবলী পুনর্লিখন করবে; নাম বদল সংক্রান্ত আবেদনগুলোর স্বয়ংক্রিয় গ্রহণ/প্রক্রিয়াকরণ আর পুরনো শর্তানুগ নয়। ব্যবসা, ব্যাংকিং, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রভৃতি সংস্থাও সময়ের সঙ্গে তাদের রেকর্ড আপডেট করবে—এতে কিছু প্রশাসনিক ঝামেলা এবং কাগজপত্রের পুনরায় সমন্বয় প্রয়োজন হবে।
আইনি ও সামাজিক গুরুত্ব কেন বেশি?
-
অধিকার ও পরিচয়: এটি ব্যক্তিগত পরিচয় এবং দম্পতির আত্মপরিচয়ের ওপর আত্মনির্ধারণের অধিকারের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ — নাম শুধুমাত্র পারিবারিক চিহ্ন নয়, এটা পরিচয়, আর্থ-সামাজিক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক। সংবিধানিক দৃষ্টিতে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করার একটি নতুন আদর্শ স্থাপিত হলো।
-
নীতিগত বিতর্ক: অপরদিকে কিছু সমালোচক বলবেন যে পারিবারিক ও ঐতিহ্যগত সামাজিক মানদণ্ডে হঠাৎ করে পরিবর্তন দ্রুত ঐতিহ্যগত সুরক্ষাকে দুর্বল করে দিতে পারে—এই বিতর্ক চলতেই থাকবে।
পরের ধাপ কী (টাইমলাইন)
আদালত সংসদকে আইন সংশোধনের জন্য সময়সীমা দিয়েছে; আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলি জানিয়েছে সংসদ ও রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট (প্রায় দুই বছর) সময় দেওয়া হয়েছে যাতে আইন ও বিধিমালা সংশোধন করা যায়। সেই সময়ের মধ্যে প্রশাসন অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে যাতে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত না হয়। AP News+1
সংক্ষিপ্ত উপসংহার
দক্ষিণ আফ্রিকার এই রায়—আইনগতভাবে এবং প্রতীকীভাবে—লিঙ্গভিত্তিক আইনি অবহেলার বিপরীতে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে: নাম ও পরিচয় সংক্রান্ত অধিকারও সমতার অংশ। বাস্তবে কীভাবে সংসদ ও প্রশাসন এটি প্রয়োগ করবে, এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে; তবে আইনি প্রেক্ষাপটে এটি এক নজিরবাহী সিদ্ধান্ত।