ঢাকা,  রোববার
২৯ জুন ২০২৫

Advertisement
Advertisement

কি মশা কেন আপনাকে কামড়ায়? মশাবাহিত রোগ হলে কী করবেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০১, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ১৪:০৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

কি মশা কেন আপনাকে কামড়ায়? মশাবাহিত রোগ হলে কী করবেন?

মশা নিতান্তই ছোট একটি পতঙ্গ অথচ এর মতো জ্বালাতনকারী কীট বিশ্বে বোধহয় আর নেই। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পৃথিবীতে মশার অস্তিত্ব আছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে। এর মধ্যে এনোফিলিস, এডিস, কিউলেক্স প্রজাতির মশা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। মশার একটিমাত্র কামড় একজন মানুষের জন্য মরণঘাতি হয়ে উঠতে পারে। রোগসৃষ্টিকারী বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী বহন করায় মশার কামড়ে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

ছোট-বড় সব মানুষই মশার কামড়ে কাবু হয়েছেন, যখন তখনই হচ্ছেন। কখনো কখনো ভীষণ বিরক্ত হয়ে অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জেগেছে, 'মশা একটু বেশিই কামড়াচ্ছে?'  শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা এখন যেন সারা বছর জুড়েই মশার উৎপাত! মশার কামড় থেকে ভনভন শব্দ, সবই যেন চরম অস্বস্তির উদ্রেক করে। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি মশা কেন কামড়ায়? 

কি মশা কেন কামড়ায়?

*** পুরুষ মশারা কামড়ায় না। ফলে কোনও রোগ বহন করে না। মূলত স্ত্রী মশাই কামড়ায় এবং রক্ত শুষে নেয়। জানা যায়, স্ত্রী মশারা রক্ত না পেলে ডিম পারতে পারে না।

*** মশা কামড়ালে অনেক সময় ত্বক ফুলে ওঠে, চুলকোয়। তার নেপথ্যেও কারণ আছে। মশারা হুলের মতো প্রবোসিস দিয়ে রক্ত শুষে নয়। মশারা যখন কামড়ায়, তখন সেগুলোর সালাইভা অর্থা‍ৎ ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়।

*** সেই কারণে শরীরের যে জায়গায় মশা কামড়ায়, সেই অংশটি ফুলে যায়। চুলকাতে শুরু করে। অনেকের ক্ষেত্রে যদিও মশার কামড় আরও বড় সমস্যা ডেকে আনে।

*** মশার কামড় অনেক সময় বড় রোগ ডেকে আনে। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দয়। অনেক সময় সেই ফোলা জায়গার চুলকুনি থেকে সংক্রমণও দেখা দেয়।  

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, কিছু কিছু মানুষকে আসলেই মশা বেশি কামড়ায় এবং বাকিদের কম!

নিউ ইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিদ্যার গবেষক লেসলি ভসহলের নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাটি বলছে, কিছু কিছু মানুষের চামড়ায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা মশাকে আকৃষ্ট করে। সারাজীবনই সেই উপাদানগুলো তাদের ত্বকে পাওয়া যায়। তাই মশারা সবসময়ই তাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবে! 

কিন্তু কেন এমনটা ঘটে? গবেষকদের দাবি, যাদের মশা বেশি কামড়ায় তাদের ত্বকে কিছু বিশেষ ধরনের অ্যাসিড ক্ষরিত হয়। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে এই অ্যাসিডগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক ভেদে বিভিন্ন মানুষের দেহে বিভিন্ন হারে এই উপাদানগুলো ক্ষরিত হয়। ত্বকে বসবাসকারী কিছু ব্যাক্টেরিয়া এই অ্যাসিড থেকে উৎপাদিত 'পিচ্ছিল' কণাগুলোর উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। মানুষের গায়ের গন্ধও কিছুটা এই উপাদানের উপর নির্ভর করে। 

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই উপাদানের প্রতিই আকৃষ্ট হয় মশা। যেহেতু এই অ্যাসিডগুলো ত্বকের স্বাভাবিক উপাদান, তাই জোর করে এই উপাদানগুলো শরীর থেকে দূর করতে গেলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং, মশার কামড় থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই বললেই চলে!   

পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ১০০ টির মত প্রজাতি রোগ ছড়ায়।

এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে মশা থেকে ২০টির মত রোগ ছড়ায়। পুরো পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ।

মশাবাহিত কিছু রোগ

বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে। এর মধ্যে এনোফিলিস, এডিস, কিউলেক্স প্রজাতির মশা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। মশাবাহিত কিছু রোগ হলো-ডেঙ্গিজ্বর, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস জ্বর, ইয়োলো ফিভার বা পীতজ্বর, জাপানিজ এনকেফালাইটিজ, ওয়েস্ট-নীল ফেভার ইত্যাদি।  

মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ থাকার উপায় 

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার এই দুইটি রোগের জন্যই দায়ী এডিস মশা সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার আগে এডিস কামড়ায়। ফলে এই দুই সময়ে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

ঘুমানোর সময় মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে।

বাড়ির ছাদে বা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনে, বাতিল টায়ার কিংবা প্লাস্টিক কন্টেইনার- কোথাও যাতে তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি পানি জমা না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

মশার কামড় থেকে বাঁচতে নানা ধরণের রিপেলেন্ট অর্থাৎ মশা তাড়ানোর পণ্য যেমন বিভিন্ন ধরণের কয়েল, স্প্রে, ক্রিম জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা, তবে এর মাত্রা ও প্রয়োগ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

এগুলো সবই মশাবাহিত কোন রোগে আক্রান্ত হবার আগের সতর্কতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন মশা তাড়াতে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায় চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। তবে ঢাকায় মশার সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে এসব কায়দা কতটা খাটবে সে আশংকা রয়েছে।

অ্যানোফিলিস মশা

অনেক বছর ধরে মশা তাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন কয়েকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো:

নিমে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ রয়েছে। প্রাচীনকালে মশা তাড়াতে নিমের তেল ব্যবহার করা হত। ত্বকে নিম তেল লাগিয়ে নিলে মশা ধারে-কাছেও ভিড়বে না বলে প্রচলিত।

বলা হয়ে থাকে মশা কর্পূরের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে কর্পূর দিয়ে রাখলে মশা পালিয়ে যায়।

লেবু আর লবঙ্গ একসঙ্গে রেখে দিলে ঘরে মশা থাকে না বলে প্রচলিত আছে। এগুলো জানালায় রাখলে মশা ঘরে ঢুকতে পারবে না।

ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে রোদে শুকিয়ে সেটা জ্বালালে চা পাতার ধোঁয়ায় ঘরের সব মশা-মাছি পালিয়ে যাবে। কিন্তু এতে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হবে না। 

মশা নিয়ে কয়েকটি মজার তথ্য

একটি মশা সেকেন্ডে প্রায় ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপটায়, মশা ওড়ার সময় এই ডানা ঝাপটানোর শব্দই শুনি আমরা।

কেবলমাত্র স্ত্রী মশাই মানুষকে কামড়ায়, পুরুষ মশা নয়।

মশা ঘণ্টায় প্রায় দেড় মাইল বেগে উড়তে পারে।

ডিম ফুটে বের হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই মশা মানুষকে কামড়ে রক্ত শুষে নেয়।

মশা স্তন্যপায়ী প্রাণীকে কামড়ানোর পাশাপাশি পাখি ও সরীসৃপের শরীরেও হুল ফোটায়।

মশা তার নিজের ওজনের তিনগুণ রক্ত শুষে নিতে পারে। 

১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেছিলেন। চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস পালন করা হয়। মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, টিভি৯ বাংলা, বিবিসি

এসএস 

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531