ঢাকা,  রোববার
০১ জুন ২০২৫

Advertisement
Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তুলা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব বাংলাদেশের: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

প্রকাশিত: ১৯:০২, ২৯ মে ২০২৫

আপডেট: ১৮:৩৪, ৩১ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তুলা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব বাংলাদেশের: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঝুঁকির মুখে রয়েছে, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা আপাতত স্থগিত রেখেছেন। তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি কৌশলগত প্রস্তাব এসেছে—যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তুলা, তেল ও গ্যাস আমদানি করা।

এই প্রস্তাবটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত নিক্কেই এশিয়ার বার্ষিক "ফিউচার অব এশিয়া" সম্মেলনের সাইডলাইনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে জোরদার করার কৌশল

ড. ইউনূস বলেন, "ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য আলোচনায় এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে। আমরা দেখছি—যেহেতু মধ্য এশিয়া এবং ভারত থেকে প্রচুর তুলা আমদানি করি, তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কিনে সেই ঘাটতি কমাব না?"

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৭৯০ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করে, যার মধ্যে বড় অংশ আসে উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ভারত থেকে। অন্যদিকে, গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ৩৬ কোটি ডলারের তুলা আমদানি হয়েছে, যেখানে ৬৮০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, এবং আমদানি হয়েছে ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য—ফলে স্পষ্ট একটি বাণিজ্য ঘাটতি বিরাজ করছে।

রাজনৈতিক সুবিধার প্রত্যাশা

ড. ইউনূস জানান, "যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদকেরা আমাদের ভালো বন্ধু হয়ে উঠছেন। তাঁরা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে আমাদের জন্য সহায়ক হতে পারেন। আমেরিকার কটন বেল্টের কংগ্রেস সদস্যরা যদি আমাদের সমর্থন করেন, তবে বিষয়টি আরও ইতিবাচক দিকে যাবে।"

জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রেও নতুন দিক

বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করে। তবে ড. ইউনূস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তেল ও গ্যাস আমদানি করা যেতে পারে, যা বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি কৌশলগত সম্পর্ককে দৃঢ় করবে।

শুল্ক ইস্যু: হুমকি নয়, বরং সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক আদালত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে—সংবিধান অনুযায়ী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের। এই রায়ের ফলে তাৎক্ষণিক শুল্ক আরোপের ঝুঁকি কমলেও আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

ড. ইউনূস বলেন, "আমরা বিষয়টিকে হুমকি হিসেবে দেখছি না। বরং এটি আমাদের জন্য একটি সুযোগ—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীরতর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার।"


পাচার হওয়া সম্পদ ও সার্বভৌম তহবিল

সাক্ষাৎকারে দেশের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়েও মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ১১-১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ দেশের ভেতরে শনাক্ত ও জব্দ করা হয়েছে।

এই বিপুল অর্থের পুনরুদ্ধার সম্ভব হলে দুটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (Sovereign Wealth Fund) গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এই তহবিল থেকে:

  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে

  • দরিদ্র জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে

  • তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করা হবে


ড. ইউনূসের এই সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কূটনীতি নিয়ে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক সম্পদের পুনরুদ্ধার, নতুন তহবিল গঠন ও কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531