
গুগল পে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল ওয়ালেট’, যা বিশ্বব্যাপী ‘গুগল পে’ নামেই অধিক পরিচিত। প্রযুক্তি-প্রেমী শহুরে জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে আগামী এক মাসের মধ্যেই এই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে গুগল ও দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক সিটি ব্যাংক।
স্মার্টফোনই হবে ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’
গুগল ওয়ালেট চালু হলে স্মার্টফোন হয়ে উঠবে গ্রাহকের পকেট-ব্যাংক। এনএফসি (NFC) প্রযুক্তিসাপোর্টেড অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে যে কেউ 'ট্যাপ অ্যান্ড গো' পদ্ধতিতে যেকোনো কনট্যাক্টলেস পেমেন্ট টার্মিনালে লেনদেন করতে পারবেন। ফলে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে আসবে।
সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা প্রাথমিকভাবে তাদের ভিসা ও মাস্টারকার্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায়) গুগল ওয়ালেটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। পরে অন্যান্য ব্যাংক ধাপে ধাপে যুক্ত হবে এই ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই
যেহেতু গুগল ওয়ালেট সরাসরি কোনো আর্থিক তথ্য সংরক্ষণ করে না এবং সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তাই এই অ্যাপ চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। তবে, গুগল ওয়ালেটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের আগে প্রতিটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।
লেনদেনে চার্জ কেমন?
গুগল ওয়ালেট সাধারণত ব্যবহারকারীদের থেকে অতিরিক্ত কোনো চার্জ নেয় না, যদি ব্যবহারকারী নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন। তবে ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে চার্জ আরোপিত হতে পারে, বিশেষ করে যদি লেনদেনটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ হয় বা বিদেশি মুদ্রা জড়িত থাকে। তবে স্থানীয় লেনদেনে সাধারণত কোনো অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হয় না।
স্থানীয় এমএফএস খাতে প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, উপায়সহ বেশ কিছু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রচলিত। গড়ে প্রতিদিন দেড় কোটি লেনদেন পরিচালনা করে দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস অপারেটর বিকাশ।
তবে এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের আগমনকে স্থানীয় খেলোয়াড়রা সতর্কতার সঙ্গে দেখছেন। বিকাশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হোক। গুগল পে আসার ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে, তাই এটি আমাদের জন্য এক চ্যালেঞ্জও বটে।”
প্রতিবেশী দেশগুলোতে অগ্রগতি
ভারত ইতোমধ্যেই কন্টাক্টলেস ডিজিটাল পেমেন্টে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, দেশটির ৯৩% ডিজিটাল লেনদেন এবং ৯২% আর্থিক মূল্য ইউপিআই (Unified Payments Interface)-এর মাধ্যমে হয়েছে। এর মধ্যে গুগল পে একাই মোট লেনদেনের ৫১% অর্থমূল্য ও ৩৭% লেনদেন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ১২ মার্চ থেকে পাকিস্তানেও চালু হয়েছে গুগল পে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায়ও গুগল পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গুগল ওয়ালেট চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল লেনদেন খাত এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দ্রুত, নিরাপদ ও আধুনিক লেনদেনের সুযোগ পেয়ে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হবে। ব্যাংক ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগামীতে দেশের ডিজিটাল ফাইন্যান্স ইকোসিস্টেম আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।