“২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল প্রহসন”—আদালতে সিইসি হাবিবুল আউয়াল, রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতে স্বীকার করেছেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ছিল একটি ডামি নির্বাচন এবং প্রহসনের নির্বাচন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার অভাবের কারণেই এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে অংশ নেন তিনি। বিচারক যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, এমন নির্বাচন হলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন, তখন হাবিবুল আউয়াল উত্তরের পরিবর্তে বলেন, "অতীতে কোনো সিইসি পদত্যাগ করেননি।"

আদালতে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল, ১৯৯৬ সালের নির্বাচন, এবং দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগের উদাহরণ তুলে ধরেন।

এদিন আদালত হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। এর আগে বুধবার সকালেই রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

এই মামলায় ইতোমধ্যে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গত রোববার গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাদী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রহসনমূলক ভোট আয়োজনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

এ মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আদালত পুলিশের আবেদনে সেই ধারা যুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছেন।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা:

• সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

• সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

• সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারী, এ কে এম শহীদুল হকসহ অনেকে।

টাইমলাইন: “ডামি নির্বাচন” মামলার প্রধান ঘটনাপ্রবাহ

? ৫ জানুয়ারি ২০২৪:
→ একতরফাভাবে ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে।

? ২৩ জুন ২০২৫:
→ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। 
→ অভিযুক্ত: তিন সাবেক সিইসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ও পুলিশপ্রধানসহ ২৪ জন।

? ২৫ জুন ২০২৫:
→ কে এম নূরুল হুদা (২০১৮ সালের সিইসি) গ্রেপ্তার।
→ আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

? ২৬ জুন ২০২৫:
→ কাজী হাবিবুল আউয়াল (২০২৪ সালের সিইসি) মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার।
→ আদালতে তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনকে “ডামি নির্বাচন” ও “প্রহসন” বলে স্বীকার করেন।
→ আদালত তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
→ রাষ্ট্রদ্রোহ ধারা মামলায় যুক্ত করা হয়।