ঢাকা,  মঙ্গলবার
২৪ জুন ২০২৫

Advertisement
Advertisement

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে রাশিয়ার সূক্ষ্ম ভারসাম্য: পুতিন বললেন, মিত্রদের পাশে মস্কো

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৩ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে রাশিয়ার সূক্ষ্ম ভারসাম্য: পুতিন বললেন, মিত্রদের পাশে মস্কো

ইরান-ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এক নতুন মোড় নিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক হামলার পর এই সংঘাতে নিজেদের জড়িয়েছে ওয়াশিংটন। এমতাবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েল—দুই বিপরীত পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা রাশিয়ার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন এক সংকটপূর্ণ প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—মিত্রদের প্রতি মস্কোর প্রতিশ্রুতি অটুট এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছে রাশিয়া।

রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, প্রেসিডেন্ট পুতিন মিত্রদের প্রতি রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন, তাঁদের ‘উসকানিদাতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়া একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।”

সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের এক প্লেনারি অধিবেশনে পুতিন বলেন, “আজকের দিনে ইসরায়েলে প্রায় ২০ লাখ রুশভাষী মানুষ বাস করছেন। এটি প্রায় রুশভাষীদের একটি দেশ হয়ে উঠেছে। আমরা আমাদের নীতিনির্ধারণে সব সময় এটিকে বিবেচনায় রাখি।” একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ ইসলাম ধর্মের অনুসারী, এবং রাশিয়া ওআইসির একজন পর্যবেক্ষক সদস্য।

পুতিন বলেন, “রাশিয়া একদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে উষ্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক উপভোগ করছে, অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে আমাদের একটি শক্তিশালী সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা ইরানের সঙ্গে আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছি এবং তাদের বুশেহরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করেছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা, কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে রাশিয়া। আল–জাজিরা জানায়, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, “একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। এটি জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

রাশিয়া আরও বলেছে, “আমরা এই আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি এবং চলমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পথে ফেরানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে জোর দিচ্ছি।”

কূটনৈতিক তৎপরতা

ইসরায়েলের হামলার পরপরই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি রাশিয়া সফরে গিয়েছেন। আজ সোমবার তাঁর সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে চলমান সংঘাত বন্ধে সম্ভাব্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

গত সপ্তাহে পুতিন মধ্যপ্রাচ্যের এই নতুন সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কটাক্ষ করে বলেন, “পুতিনের উচিত অন্যদের সংঘাতে মধ্যস্থতা না করে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করা।”

রাশিয়ার সূক্ষ্ম ভারসাম্য

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে, তা বর্তমানে এক জটিল পরীক্ষার সম্মুখীন। একদিকে তেহরানকে বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হিসেবে পাশে রেখে, অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে মস্কো কূটনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান শক্ত রাখার চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়া এখন এমন এক কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে যেখানে তাকে কেবল কূটনীতির ভাষায় কথা বলেই নয়, বরং বাস্তব পরিণতি বিবেচনায় নিয়েই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হবে। কেননা, এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকেও প্রভাবিত করছে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531