কোরবানির ঈদে মাংস বেশি খাওয়া হয়। যেমন গরু, খাসি, মহিষ, এমনকি কারও কারও মেনুতে উটের মাংসও থাকে। কিন্তু মাংস তো খাবেনই, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হতে হবে পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত। কতটুকু খাওয়া যাবে বা তার প্রতিক্রিয়া কী হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
খাবারের পরিমাণ
খাবারের পরিমাণটাই আসলে মূল সমস্যা। কোরবানির মাংস পরিমাণে একটু বেশিই খাওয়া হয়। আর একসঙ্গে প্রচুর খাবার খেয়ে ফেলায় তা হজম করতে পারেন না অনেকে। বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়া হলে অনেকের হজমে সমস্যা হয়, পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে। যার ফলে অকেনে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। তাই মাংস খাওয়ার পরিমাণ হঠাৎ বাড়ানো যাবে না। খেতে হবে পরিমিত।
সকালের খাবার হতে হবে হালকা
ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অল্প করে সেমাই বা পায়েস খেতে পারেন। সঙ্গে খেজুর বা খুরমা, ফলের রস, ডাবের পানি খেতে পারেন। খাওয়ার আধ ঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নামাজ পড়তে যান।
খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে
যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা পছন্দমতো সবই খেতে পারেন। বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই যাঁদের এনাল ফিশার ও পাইলসজাতীয় রোগ আছে, তাঁদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা বাড়তে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি খান। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন।
চর্বি এড়িয়ে চলুন
যেকোনো পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। লাল মাংস প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস, শরীরের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও শরীরের গঠনে যার ভূমিকা অপরিসীম। তবে লাল মাংসের যেমন উপকার আছে, তেমনি রয়েছে অনেক ঝুঁকিও। এতে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট; যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল থাকে। এগুলো শরীরের ওজন বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, ডায়াবেটিস–সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি করে।
বয়স্কদের সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ
মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা আরও জরুরি। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, ইত্যাদি না থাকা সত্ত্বেও এই বয়সের সবাইকেই ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। বেশি মাংস খেলে তা পরিপূর্ণভাবে হজম করতে অনেক সময় লাগতে পারে। এতে পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, ভরা ভরা ভাব, বারবার ঢেকুর ওঠা, এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।
স্ট্রোক ও হৃদ্রোগে আক্রান্তদের জন্য
স্ট্রোক ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীরা অবশ্যই তৈলাক্ত মাংস কমিয়ে খাবেন। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে যে ধরনের নিয়মকানুন তাঁরা সারা বছর পালন করেন, ঈদের সময়ও সেভাবে চলা উচিত। কোরবানির মাংস একটু–আধটু বেশি খেলে শরীরের যে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তা নয়, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।